সাধারন মানুষের মধ্যে আর্কিটেকচার ও ডিজাইন নিয়ে সচেতনতা গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে বাংলা ভাষায় একমাত্র অনলাইন ম্যাগাজিন

কিভাবে সুন্দর করে সাজিয়ে তুলবেন আপনার বুক শেল্ফ?

How best to design your bookshelf and put it to efficient use?

0 1,631

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

Spread the love

স্থাপত্য শব্দটা শুনলেই বড় বড় বাড়ি, ইমারতের কথা মনে পড়ে। আচ্ছা, বাইরের গল্প তো হল, কিন্তু ভেতর টা? বাড়ির অন্তঃসজ্জার সাথে স্থাপত্যবিদ্যার কোনো সম্পর্ক থাকতে পারে ভাবেন নি তো? মজাটা ঠিক এইখানেই!

স্থাপত্যবিদ্যার আসল উদ্দেশ্যই হল  শূন্য থেকে সৃষ্টি করে এমন একটা আধার তৈরী করা যা আপনার মস্তিষ্কের কাছে আরামদায়ক হবে।

মস্তিষ্কের কথা হঠাৎ উঠল কেন? ব্যাপারটা একটু বুঝিয়ে বলি। ধরুন একটা বড় পাঁচতারা হোটেলে গেছেন। বাইরের কারুকার্য দেখে মুগ্ধ হয়ে ভেতরে ঢুকতেই সব কিছু পাল্টে গেল। একটা সাজানো গোছানো রিসেপশন, মাথার ওপরে ঝালর, দেওয়ালের কাজ – সবই আছে,  কিন্তু কিসের যেন একটা অভাব। এই ‘কিছু একটা’ই হল অন্তঃসজ্জার বৈজ্ঞানিক তাৎপর্য  – আপনার মানসিক গঠনের সাথে যা ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছে। এই অভাব পূরণ করাটাই একজন স্থাপত্যবিদের কাজ।

এবার একটু ভালো করে ভেবে দেখুন, আপনার বাড়ির শোবার ঘরের পরিবেশ একরকম আবার অফিসে যে ঘরে বসে আপনি কাজ করেন তার পরিবেশ একেবারেই অন্যরকম – আপনার কাছে দুটোই বেশ সুখকর। কিন্তু দুটোকে বদলে দিই যদি? তাহলেও কি ব্যাপারটা একইরকম সুবিধাজনক থাকবে? মানে ধরুন অফিসে বসে ঘুম পেল আর বাড়িতে নিজের ঘরে ঢুকলেই কাজ করতে ইচ্ছে করছে – কি কেলেঙ্কারিটাই না হবে! অর্থাৎ একইরকম ব্যবস্থাপনা সব জায়গায় খাটে না – অন্তঃসজ্জার একটা ব্যবহারিক তাৎপর্য  রয়েছে।

আমাদের একটা স্বভাব রয়েছে – কোনো নতুন জায়গায় গিয়ে অস্বস্তি বোধ করলেই নিজেদের কে স্বান্ত্বনা দিই – অভ্যেস হয়ে যাবে। কথাটা খানিকটা সত্যি। কিন্তু এই অস্বস্তিটাই যদি সপ্তাহ,  মাস পেরিয়ে বছর ঘুরতে থাকে তাহলে বুঝতে হবে যে গোড়াতেই গণ্ডগোল। অফিসের দেওয়ালে একটা বিশেষ রঙ থাকলে হয়তো আপনার কর্মদক্ষতা বাড়ে, ঘরের একটা বিশেষ দিকে কোনো আসবাব পত্র রাখলে মনে শান্তি পান – এগুলো শুধু মাত্র অভ্যেস নয়, আপনার মস্তিষ্কের প্রতিক্রিয়া।

এবার আসি কাজের কথায়। এতক্ষণ ধরে যা বললাম সবটাই একটা সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গী থেকে। আজ একটা ছোট্ট বিষয় নিয়ে কথা বলব। বই পড়ার অভ্যেস কম বেশি আমাদের সকলেরই থাকে। তা না হলেও বাড়িতে দরকারী বই পত্র তো থাকেই। আজকের এই এত লেখা সব ওই বইয়ের তাক নিয়ে। একটা সামান্য বইয়ের তাক, তার অবস্থান, আকৃতি যে আপনাকে তাক লাগিয়ে দিতে পারে তা ভাবেন নি তো কখনো?

নিজের শোবার ঘরে ফিরে যান আবার – খাটের মাথার দিকের দেওয়ালে একটা বইয়ের তাক থাকলে কেমন হয়? আমারা সাধারণত যে ধরনের তাক দেখি ঠিক সেরকম মেঝেতে বসানো নয়, কতকটা দেওয়াল আলমারির মতো। বিশ্রাম নেওয়ার সময় বই পড়তে ইচ্ছে করলে বেশি দূর যেতে হল না।

এবার আসি লিভিং রুমের দিকে। ধরুন আপনার বাড়িতে একজন গুরুত্বপূর্ণ অতিথি এসেছেন – আপনি হয়তো তাঁকে শোবার ঘরে নিয়ে যাবেন না, কিন্তু বসার ঘরেই তাঁর একটু মনোরঞ্জনের ব্যবস্থা করা যেতেই পারে। অথবা গেস্ট রুমের কোণে মেঝের উপর বসানো একটা বুকশেলফ। এ তো হল ব্যবহারিক দিক টুকু, এ তে আবার নতুন কী? আছে মশাই, আছে।

তাহলে আবার ফিরে আসা যাক আপনার মস্তিষ্কে – প্রশন উঠতেই পারে যে একটা বইয়ের তাক নিয়ে এত আলোচনা হচ্ছে কেন?  না থাকলে কিই বা এমন এসে যায়? বই আমাদের নিজের থেকে আলাদা করে অন্য একটা জগতে নিয়ে যায়। তাই ঘরে বইয়ের তাক থাকলে আপনার মানসিক চাপ কিছুটা হলেও কমতে বাধ্য। তা ছাড়া আপনার বইয়ের সংগ্রহ আপনার ব্যক্তিত্বের প্রকাশ – তাই নিজের প্রিয় বইগুলো ঘরের একদিকে সাজানো থাকলে সেই জায়গায় আপনার নিজস্ব একটা ‘কমফোর্ট জোন’ তৈরী হয় – মানসিক সম্পর্ক গভীর হয়। গ্রন্থাগারের নিশ্চুপ শান্তির কথা মনে করুন একবার, বইয়ের সাথে মানসিক স্থিতাবস্থার যে একটা নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে তা আপনি নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই জানেন – তাই বুকশেলফ এর উপস্থিতি আপনাকে স্থির থাকতে সাহায্য করে।

কী? সব কিছুর পরেও বুকশেলফ টা রাখার জায়গা পাচ্ছেন না?  কুছ পরোয়া নেহি। বাড়িতে সিঁড়ির নীচের অংশ টা তো আছেই, অথবা কোনো সাপোর্ট কলাম – ব্যস্, তাহলে আর কি,  লাগিয়ে দিন বইয়ের তাক। এমনকী সোফার গায়েও থাকতে পারে বইয়ের তাক। তবে সবসময়ই মাথায় রাখবেন যে বইয়ের সংগ্রহের সাথে তাকের সংখ্যা বা ব্যপ্তি যেন মানানসই হয়। ভবিষ্যতের কথা ভেবে বড় করতেই পারেন তবে কিছুটা সামঞ্জস্য থাকা জরুরি –  নাহলে বুকশেলফ এর অপূর্ণতা যদি চোখে পড়ার মত হয়, তাহলে তা আপনার মস্তিষ্কেও প্রভাব ফেলতে পারে।

সবই তো হল, বাকি রয়ে গেল শুধু আকারটুকু – ‘রূপ’ দিয়ে যায় চেনা, তাইতো? বেশ, তবে রূপের কথা বলতে গেলে একটু জ্যামিতিক প্রসঙ্গ টানতেই হয়। নিজের বাড়িতে ঘর গুলোর কথা ভাবুন, বা অফিস, খাট, শো-কেস, পড়ার টেবিল, আলমারি – কোনো মিল পাচ্ছেন? ঠিক ধরেছেন – আয়তক্ষেত্র। বর্গক্ষেত্রকেও আয়তক্ষেত্রেরই একটি প্রকার বলে গণ্য করা হয়। বিজ্ঞান বলে, এই আয়তক্ষেত্রই মানব মস্তিষ্কে সবচেয়ে সুখকর আধার বলে চিহ্নিত। সহজ করে বললে, আশপাশের যা কিছু ‘রেকট্যাঙ্গুলার’, সবই আমাদের মানসিক স্বাচ্ছন্দ্ব এনে দেয়। তাই বুকশেলফ এর তাক গুলো যদি চৌকো হয় তাহলে আপনার চোখের মানিয়ে সুবিধা হবে – মানে, চোখে পড়বে কিন্তু চোখে লাগবে না।

কিন্তু আপনি চান ঘরে ঢুকেই চোখ চলে যাবে আপনার প্রিয় বুকশেলফ টার দিকে,  অন্য আসবাব পত্রের সাথে সুর না বেঁধে, এক্কেবারে অন্য ছন্দে গান ধরবে – কোনো সমস্যা নেই, একটু জ্যামিতিক অদলবদল করলেই সমাধান আপনার হাতের মুঠোয়। চতুর্ভুজ টা কে একটু ঘুরিয়ে দিন, হয়ে গেল ‘রম্বাস’ , এবার খোপ গুলোকে গাছের পাতার মতো করে সাজিয়ে একটা কৃত্রিম কাঠের গুঁড়ির সাপোর্ট দিয়ে দিলেন; অথবা বেছে নিন অন্য কোনো বহুভুজ বা ‘পলিগন’ যেমন ষড়ভুজ বা ‘হেক্সাগন’, তাক গুলো সাজিয়ে ফেলুন মৌচাকের আকারে – আরো আছে,  বলতে গেলে শেষ হবে না। আজ না হয় এইটুকুই থাক।

কী? সব গুলিয়ে গেল নাকি? একটা কথা বলি? আপনার ব্রেন কিন্তু এই অবস্থান, আকৃতি সব আলাদা আলাদা ভাবে গ্রহন করতে পারে না;  বরং সব কিছু মিলিয়ে একেবারে খিচুড়ি পাকিয়ে আপনাকে পরিবেশন করে – ইংরেজিতে যাকে বলে ‘কিউমিউলেটিভ এফেক্ট’। আমাদের কাজটা হলো পর্যাপ্ত পরিমাণে সঠিক উপাদান গুলো দিয়ে সেই খিচুড়িটাকে কিঞ্চিত সুস্বাদু করে তোলা।

লিখেছেন অরুণিমা ঘোষ

ফিচার ইমেজ ও বাকি  ইন্টারনেট থেকে।


স্থাপত্য সাধারন মানুষের মধ্যে আর্কিটেকচার ও ডিজাইন নিয়ে সচেতনতা গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে বাংলা ভাষায় একমাত্র অনলাইন ম্যাগাজিন। আমাদের পাশে থেকে ও সমর্থন করে এই উদ্দেশ্য সফল করতে আমাদের সাহায্য করুন।
ওয়েবসাইট (Website) | ফেসবুক  (Facebook) | ইন্সটাগ্রাম (Instagram) | লিঙ্কড-ইন (LinkedIn)

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

Leave A Reply

Your email address will not be published.