স্থাপত্য পাবলিশার্স
বর্ধমান । কোন্নগর । কোলকাতা
Sthapatya Publishers
Burdwan | Konnagar | Kolkata
info.sthapatya@gmail.com
Shubhayan M: +918653792921
Arunava S: +9194323 43169
স্থাপত্য পাবলিশার্স
বর্ধমান । কোন্নগর । কোলকাতা
Sthapatya Publishers
Burdwan | Konnagar | Kolkata
info.sthapatya@gmail.com
Shubhayan M: +918653792921
Arunava S: +9194323 43169
Trending
Get real time updates directly on you device, subscribe now.
বুইলেন কত্তা আজ একখান গপ্প দিয়ে শুরু করি। বাংলাদেশের এক অখ্যাত প্রত্নগবেষকের গল্প। নাম- নলিনীকান্ত ভট্টশালী। উপাধিটা শুনে ভ্রূ কুঁচকে গেল বুঝি? উপাধিটা আগে শোনেননি নিশ্চয়ই। স্বাভাবিক। আজকাল ”ভট্টশালী” উপাধির মানুষ আর চট করে চোখে পরেনা। যাইহোক, গল্পটা বলার আগে প্রথমেই এক খান ‘বিধিবদ্ধ সতর্কীকরন’ ঝেড়ে দিই। বাংলা আর বাংলার ইতিহাসকে ভালোবাসলে তবেই পড়বেন, নাহলে পড়ার পর যদি বোর হলাম বলে অভিযোগ করেন– আমি মশাই হাত তুলে দেবো!
১৯১২ সালের ২৫ জুলাই, সময়টা সন্ধে। পুরনো ঢাকার নর্থব্রুক হল। নলিনী নামে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের (১৯১২) থেকে এম.এ পাস, স্যার আশুতোষের এক অত্যন্ত প্রিয় ছাত্র উঠলেন বক্তৃতা দিতে। সামনে বসে রয়েছে ঢাকার সুশীল সমাজ আর তৎকালীন ছোট লাট লর্ড কারমাইকেল। বক্তব্যের বিষয় হল– পূর্ববাংলার প্রত্নবস্তু সংরক্ষণের জন্য ঢাকায় একটা জাদুঘর স্থাপন করতে হবে। এক ঘণ্টার বক্তব্য সবাই মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনল। লর্ড কারমাইকেল এই ২৬ বছর বয়েসি তরুণের আবেগে উজ্জ্বীবিত হয়ে নলিনীকে ২০০০ টাকা দিয়েছিলেন। এরপর ১৯১৪ সালে ঢাকা জাদুঘর প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি যোগদান করলেন কিউরেটর হিসেবে। এর আগে অবশ্য বছর খানেক বালুঘাট হাই স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে শিক্ষকতা করেছেন।
”এরপর মানুষটা প্রত্নবস্তু সংগ্রহের জন্য হন্যে হয়ে পূর্ববাংলার প্রত্যন্ত গ্রামেগঞ্জে ঘুরে বেড়িয়েছেন। ক্লান্তিহীন। সঙ্গে চিঁড়ে, মুড়ি, আখের গুড়, কাগজ, ক্যামেরা, চর্টলাইট, বেতারযন্ত্র। আজ থেকে একশ বছর আগে পথঘাট আজকের দিনের মতো সুগম ছিল না। পদ্মা-মেঘনা পেরুতে হত নৌকায়। স্থলপথের বাহন হাতি,পালকি কিংবা গরুর গাড়ি।
আজ আমরা কত সহজেই না কুমিল্লার কোটবাড়ি যাই। শীতের মিঠে রোদ গায়ে মেখে শাহবন বিহারে ঘুরে বেড়াই। তখনকার দিনে গরুর গাড়ি কিংবা পালকি ছাড়া কুমিল্লা শহর থেকে শালবন বিহারে যাওয়ার উপায় ছিল না। তা সত্ত্বেও এই তরুণ প্রত্নপাগলটি দমে যান নি। শীতগ্রীষ্ম উপেক্ষা করে মাইলের পর মাইল হেঁটেছেন অচেনা গ্রাম্যপথে। অথচ তাঁর এই প্রত্নগবেষনা কাজে বেতনের অর্থ ছিল অপর্যাপ্ত। তবে তিনি চাকরি ছাড়ার কথা ঘুনাক্ষরেও ভাবেননি। তবে কোথাও কোনও মূর্তি আবিস্কার করলেও সেটি তিনি খুব সহজেই জাদুঘরে আনতে পারতেন না। কারণ গ্রামবাসী সে মূর্তিতে সিঁদুর লাগিয়ে পূজা করত। তখন এই প্রত্নপাগল মানুষটি ওদের বলতেন, ”এ মূর্তিটি তোমরা আমাকে দাও। আমি জাদুঘরে নিয়ে পূজা দেব।” জাদুঘর সমৃদ্ধ করার জন্য যিনি দিনের পর দিন চিঁড়ে, মুড়ি আর আখের গুড় খেয়ে বসে থাকতেন পূর্ববাংলার কোনও নিভৃত গ্রামের পুকুরের পাড়ে। জনশ্রুতি, পুরাকীর্তি সংগ্রহের নেশায় একবার নাকি তিনি পুকুরের ধারে একনাগাড়ে চারদিন বসে রয়েছিলেন। যদিও জেলেদের দিয়ে জাল ফেলে বহু পরিশ্রমেও সেই পুরাকীর্তি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। নলিনীকান্তর কাছে খবর পৌঁছেছিল যে, ওই পুকুরে তামার প্লেটের একটি ভাঙা টুকরো রাখা আছে। বলাবাহুল্য, সেবার নলিনীকান্তকে হতাশ হয়ে খালি হাতেই ঘরে ফিরতে হয়েছিল। লোক মারফত খবর এলে তিনি প্রথমেই জানতে চাইতেন নিদর্শনটি কীভাবে কার কাছে রক্ষিত আছে। যদি সংবাদ পেতেন যে প্রত্নবস্তুটি কোনো ব্রাহ্মণ পরিবারের তত্ত্বাবধানে রয়েছে, তবে তিনি আদ্দি কাপড়ের পাঞ্জাবি, গলায় পুঁতির মালা এবং ধবধবে সাদা ধুতি পরে ব্রাহ্মণ বেশে হাজির হতেন। দীর্ঘদেহী গৌরবর্ণ ভট্টশালীকে ব্রাহ্মণের বেশে দেখে ওই পরিবার বা প্রতিষ্ঠান সন্তুষ্ট হয়েই ভাস্কর্যটি জাদুঘরে দান করতে অরাজি হতো না। আবার থানার দারোগা অথবা জেলা প্রশাসকের কাছে যেতে হলে তিনি অফিসের উপযুক্ত পোশাকেই অর্থাত্ শার্ট, প্যান্ট পরেই যেতেন। প্রয়োজন হলে নেকটাই ব্যবহার করতে দ্বিধা করতেন না, যদিও ভট্টশালী সব সময়ই ধুতি-পাঞ্জাবি পরে থাকতেন।
কুমিল্লার শচীনকর্তা ছিলেন যেমন সংগীতপাগোল, তেমন ঢাকায় এই মানুষটা ছিলেন আদ্যপ্রান্ত প্রত্নপাগল । তিনিই কোটালিপাড়া, সাভার, রামপাল, বজ্রযোগিনী, দেউলবাড়ি, বড়কামতা, ভারেল্লা, বিহারমন্ডল, লালমাই, ময়নামতীর মত ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোকে নিয়ে প্রথম চর্চা শুরু করেন। গ্রামের মানুষের মুখে শুনতেন উপকথা, লোকগল্প শুনে ঝাড়াই-বাছাই করে খুঁজে নিতেন সত্যিটাকে। যে সত্যি দিয়ে তৈরি হয়েছে আজকের বাংলার ইতিহাস। তাঁর সময় বাংলার ইতিহাস নিয়ে সর্বভারতীয় খ্যাতিসম্পন্ন ইতিহাসবিদ ও প্রত্নতত্ত্ববিদদের বিশেষ আগ্রহ ছিলনা। নলিনীকান্তর গবেষণাই প্রথম সবার মনে আগ্রহ জাগায়।”
বনিকবার্তা , প্রথম আলো আর সামহ্যোয়ার.ইন ব্লগগুলো থেকে সংগৃহীত।
৪০’এর দশকে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতার উত্তাপ ছড়ালে,পরিবারের সবাই যখন বাংলাদেশ ছেড়ে চলে আসছেন তখনও তিনি ঢাকা ছেড়ে আসেননি। কি করেই বা আসবেন! যে মানুষটা তার জীবনের সমস্ত ভালোবাসা,পরিশ্রম, রক্ত আর ঘাম দিয়ে ঢাকা মিউজিয়ামটাকে গড়ে তুলেছেন, প্রতিটা ঘর, প্রতিটা শোকেস, প্রতিটা আসবাব পর্যন্ত তার নিজের হাতে তৈরী, এত আবেগ, এত ভালোবাসা ছেড়ে কি যাওয়া যায়? জীবনের শেষ দিনটা অব্দি বলেছেন, ”এ দেশ তাঁর জন্মভূমি, এ দেশ ছেড়ে তিনি কোথাও যাবেন না। শেষ অব্দি ১৯৪৭ সালেই, ঢাকা জাদুঘরের কম্পাউন্ডে তার জীবনাবসান হয়।
বিশ্বাস করুন, ছোটবেলায়, ভদ্রলোকের নামটাই শুধু শুনেছিলাম ঠাকুমার (মমতা ভট্টশালী সান্যাল) মুখে। জানতাম যে ঠাকুমার জ্যাঠামশাই ছিলেন ঢাকা মিউজিয়ামের প্রথম কিউরেটর। বাবা ছেলেবেলায় শুনেছেন ঠাকুমাকে বলতে– বাংলার এক প্রখ্যাত ঐতিহাসিক নলিনীকান্তর নোটের খাতাটা নিয়ে বিখ্যাত হয়ে গিয়েছিলেন! মানুষটা তার পরিশ্রমের উপযুক্ত স্বীকৃতি পেলো না। আরও যদি দিন কয় বাঁচতেন!” ব্যাস, এটুকুই ।
ঠাকুমা যেদিন আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন, আনমনে নেট ঘাঁটছিলাম। হঠাৎ কি খেয়াল হল, গুগলে ঠাকুমার বাপের বাড়ির উপাধিটা দিয়ে সার্চ করলাম বাংলায়। প্রথমেই উঠে এল, ‘নলিনীকান্ত ভট্টশালী’। মন্ত্রমুগ্ধের মত পড়লাম একমনে। বিশ্বাস করুন পড়ার পর আনন্দ, উত্তেজনা, বিস্ময় মিলিয়ে এক অদ্ভুত অনুভূতিতে কিছুক্ষণ চুপ করে বসেছিলাম! হতে পারে আমি স্থপতি, কিন্তু বাংলার স্থাপত্য, বাংলার সমাজ, বাংলার ইতিহাসকে আমি মন প্রান দিয়ে ভালোবাসি। আমার একজন পূর্বপুরুষও যে এই বিষয়টাকে গভীর ভাবে ভালোবেসেছিলেন, এই তথ্যটা জানার পর মনে যে কি ভয়ানক আলোড়ন হল মশাই! ডিএনএ মশাই, ডিএনএ! একে অস্বীকার করি কি করে! ঠাকুমার প্রিয় বিষয় ছিল ইতিহাস আর কিংবদন্তী। আশি বছর বয়সে, জীবনের শেষ দিনটা পর্যন্ত রাত দুটো-তিনটে অব্দি মশারির ভেতর টেবিল ল্যাম্পটাকে জ্বলতে দেখেছি। বাবা ইন্সিওরেন্সে সরকারি চাকরি করেন। ইতিহাসের সাথে কোন সম্পর্ক থাকার কথাই নয়! কিন্তু এমনও দিন গেছে যেদিন দেখেছি কনকণে শীতের রাতে বাবা হঠাৎ বেরিয়ে পরলেন ঝাড়খণ্ডের কাড়মাটার যাবে বলে (বিদ্যাসাগর তার জীবনের শেষ ১৮ বছর এখানেই কাটিয়েছিলেন)। আমার কথা তো ছেড়েই দিন। সেই যে ক্লাস ইলেভেনে পাথফাইন্ডারের ক্লাস পালিয়ে বাংলার গ্রামে-গঞ্জে ঘোরার ভূত চাপল মাথায়, সেই ভর এখনও নামেনি। কোনও ওঝা গুনিনের সাধ্য নেই এই ভূত মাথা থেকে নামায়। পাগলামিটা মনের গভীরে শেকড় গেঁড়ে বসেছে। যতদিন বাঁচব, বাংলার ইতিহাস আর স্থাপত্যের সাথে নলিনীকান্তর অনুপ্রেরনা বুকের ভেতর নিয়েই বাঁচব।
দেখতে পারেনঃ লিঙ্ক ১ । লিঙ্ক ২ । লিঙ্ক ৩ । লিঙ্ক ৪ । লিঙ্ক ৫ ।
লিখেছেন অরুনাভ সান্যাল, কো- ফাউন্ডার ও এডিটর, স্থাপত্য।
ফিচার ইমেজ ইন্টারনেট থেকে।
স্থাপত্য সাধারন মানুষের মধ্যে আর্কিটেকচার ও ডিজাইন নিয়ে সচেতনতা গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে বাংলা ভাষায় একমাত্র অনলাইন ম্যাগাজিন। আমাদের পাশে থেকে ও সমর্থন করে এই উদ্দেশ্য সফল করতে আমাদের সাহায্য করুন।
ওয়েবসাইট (Website) | ফেসবুক (Facebook) | ইন্সটাগ্রাম (Instagram) | লিঙ্কড-ইন (LinkedIn)
Get real time updates directly on you device, subscribe now.
Arunava graduated in Architecture from IIEST, Shibpur in May 2018. He recently acquired his Master's Degree in Rural Management (PGDRM) from the Institute of Rural Management, Anand (IRMA). He has an interest in Rural Sales, Marketing, and Consumer Behavior.
Arunava was a part of a National Team that won the ISB Invest-O-Pact by presenting a startup idea in the social impact space in ISB's Annual International Management Festival 2020. Arunava also won the Unknown Crafts Person Trophy, a national competition hosted by the National Association of Students of Architecture (NASA) in 2016. In the year 2018, Arunava co-founded Sthapatya (http://sthapatya.co/) which is India's first online magazine on Architecture in the Bengali Language.
Prev Post
Next Post
Recover your password.
A password will be e-mailed to you.
Arunava, khub bhalo laglo pore. Onar somporke ebong onar kaaj somporke onek kichu janar ichhe korche.
আমার এক পিসির বিয়ে হয়েছিল ওঁর ছেলের সঙ্গে৷ পিসেমশাইয়ের নাম এখন আমার মনে নেই৷ কিন্তু তিনি খড়গপুরের অধ্যাপক ছিলেন৷একটি অগ্নিকাণ্ডে দুজনেরই মৃত্যু হয়েছিল৷
জেনে ভালো লাগলো।সমৃদ্ধহলাম।শ্রদ্ধা জানাই।
Dear Arunabha ,
Thank u at the outset for bringing my Dadu’s (my mother’s father) work to the fore. Shared the same with the current immediate Bhattasali descendants, I.e. my cousin brothers and sisters settled in India and abroad. In fact came to know much about my dadu only from my mother as he had demised at a premature age and my mum is also no more.
It was like turning over the pages of that part of history , with whom I am linked in the family tree and which has long passed into oblivion.
This acknowledgement is an expression of thanks and gratitude
Mr. Mukherjee: I noticed your comment on an blog by Anurabha about my paternal grandfather, Nalini Kanta Bhattasali. From the description of your relationship to him, it seems you are a cousin. I would like to know about you and how we are related. I live in the US, and have been here the better part of 45 years! I look forward to hearing from you. I am compiling an extensive family history, so it would be great if I could fill it in with genealogy and anecdotes. Any further contacts you can provide about the sprawling Bhattasali clan would also be appreciated. Regards, Deepak Bhattasali
রক্তের ধারাবাহিকতা একেই বলে।নলিনীকান্ত কত বছর বেঁচেছিলেন।সেই ঝেঁপে দেওয়া ঐতিহাসিকটির নাম জানা যায় না ! নলিনীকান্ত সম্পর্কে আরও জানতে চাই।
খুবই তথ্যবহুল এবং চমৎকার রচনা!
নলিনীকান্ত খুব একটা অখ্যাত অপরিচিত ছিলেন না।বাংলার ইতিহাস নিয়ে একটু আধটু পড়াশোনা যারা করেছে ওনার নাম তাদের বেশ পরিচিত।উনিশ শতকের শেষ দিক থেকে বাংলায় ইতিহাস চর্চার এক জোয়ার আসে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদীর বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ এর হাত ধরে।এরপর বিশ শতকের শুরুতে অক্ষয় কুমার মৈত্র, রমাপ্রসাদ চন্দের বরেন্দ্র রিসার্চ সোসাইটি এবং তারপরে রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, রমেশচন্দ্র মজুমদার বাংলার ইতিহাস চর্চা কে আরও এগিয়ে নিয়ে যান।নলিনীকান্ত এই সময়ের অত্যন্ত উঁচুদরের ঐতিহাসিক যার কাজ তার সসমসাময়িক এবং পরবর্তী ঐতিহাসিকরা যেমন দীনেশচন্দ্র সরকার শ্রদ্ধা সহকারে উল্লেখ করেছেন।
… [Trackback]
[…] Read More: sthapatya.co/a-tribute-to-the-noted-archaeologist-nalini-kanta-bhattasali/ […]