স্থাপত্য পাবলিশার্স
বর্ধমান । কোন্নগর । কোলকাতা
Sthapatya Publishers
Burdwan | Konnagar | Kolkata
info.sthapatya@gmail.com
Shubhayan M: +918653792921
Arunava S: +9194323 43169
স্থাপত্য পাবলিশার্স
বর্ধমান । কোন্নগর । কোলকাতা
Sthapatya Publishers
Burdwan | Konnagar | Kolkata
info.sthapatya@gmail.com
Shubhayan M: +918653792921
Arunava S: +9194323 43169
Trending
Get real time updates directly on you device, subscribe now.
”নতুন বাড়ি বানাচ্ছেন বা অদূর ভবিষ্যতে বানানোর কথা ভাবছেন? সেক্ষেত্রে স্থপতির পরামর্শ নিচ্ছেন?” – এই প্রশ্নটা করলে সাধারণ মধ্যবিত্ত সাধারণত নীচের উত্তরটা দিয়ে থাকেন।
ধুর মশাই! পাগল নাকি! সে তো অনেক খরচের ধাক্কা! আর তাছাড়া পাড়ার মিস্ত্রি থাকতে সামান্য বাড়ির জন্য স্থপতির কি প্রয়োজন? পাড়ার রাজমিস্ত্রি তো শুধু বাড়ি তৈরিই করে দেয় না, তার সাথে সাথে ফ্রিতে প্ল্যানটাও করে দেয়। অনেক কমে হয়ে যাবে।
খুব সত্যি কথা। সবাই তাই ভাবে! আর গড়পড়তা মধ্যবিত্ত বাঙালি তিলে তিলে গোটা জীবনের সঞ্চয় জমিয়ে যখন বাড়ি তৈরি করে তখন টাকার বিষয়টাও ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ হয়। সেক্ষেত্রে একজন স্থপতির কাছে যাওয়াটা বিলাসিতা মনে হয়! সেটাই স্বাভাবিক!
তো বেশ। মেনে নিলাম আপনার যুক্তি। আর্কিটেক্টের কোন প্রয়োজন নেই সাধারণ গৃহ নির্মাণের ক্ষেত্রে এবং আপনার যুক্তি মেনে নিয়েই সেক্ষেত্রে একটা প্রশ্ন করি আপনাকে। বলুন তো আজকের দিনে সাধারণ আরসিসি ফ্রেম স্ট্রাকচার (RCC Frame Structure) বানানোর খরচ কত?
জায়গা বিশেষে মোটামুটি গড়ে প্রতি স্কোয়ার ফুট বানাতে খরচ হয় ১১৫০ – ১৬০০ টাকা। টাকার অঙ্কটা মাথায় রাখুন। এবার আপনার পাড়ার রাজ মিস্ত্রির বানানো বাড়ির প্ল্যানটার দিকে তাকিয়ে দেখুন। শতকরা ৯৯ ভাগ ক্ষেত্রে এই প্ল্যানগুলোয় এমন অনেক নেগেটিভে স্পেস বা জায়গা থাকে যেগুলো আপনার দৈনন্দিন জীবনে কোনরকম কাজেই আসেনা! যেমন ধরুন করিডোর– যে জায়গাটার প্রকৃত অর্থে সেরকম কোন ব্যবহারই নেই! তবু দেখবেন এই সব পাড়ার মিস্ত্রির বানানো বাড়িতে উপর নীচের তলা মিলিয়ে অন্তত ৪০–৫০ স্কোয়ার ফিট জায়গা জুড়ে থাকে এই করিডোর! এবার হিসেব করে দেখুন এই অপ্রয়োজনীয় করিডোরগুলো বানাতে আপনি কিভাবে আপনার গাঁটের কড়ি খরচ করেছেন! খুব কম করে হলেও অন্তত ৩-৪ লাখ টাকা খরচ করেছেন এই স্পেসগুলোর নির্মাণে। অথচ একজন স্থপতির কাছে গেলে আপনার এই খরচাটাই শুধু বেঁচে যেতনা বরং বাড়ির প্ল্যানটাও হত অনেক ফাংশানাল যেখানে এই অপ্রয়োজনীয় স্পেসগুলো থাকত না!
এ তো গেল একটা সামান্য উদাহরণ। এছাড়াও আনপ্ল্যান্ড বাড়িতে এমন অসংখ্য স্পেস থেকে যায় যে জায়গা গুলোকে জোর করে ব্যবহার করতে হয়। অথচ বাড়ির প্ল্যান হওয়া উচিত আপনার পরিবার, প্রয়োজনীয়তা এবং আসবাব পত্রের কথা মাথায় রেখে! প্রতিটা বাড়ির প্ল্যান হবে স্বতন্ত্র! বাড়ির প্ল্যান তৈরি করার সময় খেয়াল রাখতে হবে ভবিষ্যতের কথাও– যাতে পরে প্রয়োজন অনুযায়ী নির্মাণের সময় কোন সমস্যা না হয়! কিন্ত পাড়ার রাজ মিস্ত্রির এত সব ভাবার সময় কোথায়, সে তার গতে বাঁধা ছকে আপনার বাড়িটা বানিয়ে দেবে! আর একজন স্থপতিকে ঠিক এখানেই দরকার, যিনি আপনার সাথে বসে গভীর আলোচনার মাধ্যমে জেনে নেবেন আপনার সংসারের চাহিদা এবং প্রয়োজনীয়তা– যার প্রতিফলন থাকবে আপনার বাড়ির ডিজাইনে! একজন স্থপতি তার জীবনের দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে এই বিষয়টা নিয়েই চর্চা করেন। আপনি আপনার পাড়ার ‘রাজু মিস্ত্রির’ করা বাড়ির প্ল্যান এবং একজন স্থপতির করা বাড়ির প্ল্যান– দুটোকে পাশাপাশি রাখলেই পার্থক্যটা বুঝতে পারবেন।
এবার একবার ঠাণ্ডা মাথায় ভেবে দেখুন তো, আপনি যে বাড়িটা বানাবেন তার আয়ু কত হবে? ভারতীয় মধ্যবিত্ত অনেক কষ্টার্জিত সঞ্চয়কে তিলে তিলে জমিয়ে নিজের স্বপ্নের বাড়ি বানানোর কাজে হাত দেন, যার সাথে জড়িয়ে থাকে অনেক আবেগ, অনেক স্বপ্ন ও আশা! খুব কম হলেও একটা বাড়ির স্থায়িত্ব হয় অন্তত ৩০–৪০ বছর! একটা বাড়িতে দু-তিনতে প্রজন্ম বেড়ে ওঠে। একজন মানুষ গড়ে তার জীবনের লক্ষাধিক ঘণ্টা কাটিয়ে দেয় এই বাড়ির গণ্ডীর মধ্যে! আপনার শিশুর, কৈশোর কাটিয়ে যৌবনে পা দেওয়ার সাক্ষী হয়ে থাকে আপনার বাড়ির এই স্পেসগুলোই এবং এটা প্রমানিত সত্যি যে শিশু মনের বিকাশে দীর্ঘস্থায়ী ছাপ রেখে যায় তার বাড়ির পরিবেশ, স্পেস এবং ডিজাইন। এক অত্যন্ত ঘরকুনো এবং লাজুক কিশোরের বেডরুমের ডিজাইন বদলে দেবার পর মাত্র ছয় মাসের মধ্যে তার ব্যক্তিত্ব এক আমূল পরিবর্তন এসেছে। এরকম ঘটনা শুধু শোনা নয়, আমার নিজের চোখে দেখা। এছাড়াও আপনার বাড়িটা হয়তো খুব ছোট হলেও এই পৃথিবীর বুকে আপনার অস্তিত্বের চিহ্ন হিসেবে থেকে যাবে আগামী বহু বছর ধরে! কিন্ত কি আশ্চর্য! এত দীর্ঘস্থায়ী, এত চিরকালীন একটা নির্মাণের সময়ই সাধারণ মানুষ ভরসা রাখেন হাতুড়েদের উপর!
কি মনে হচ্ছে? বড্ড বেশী দার্শনিক হয়ে যাচ্ছে বিষয়টা? বেশ, তবে এবার কিছু কাটখোট্টা বাস্তব দিক নিয়ে আলোচনা করা যাক! আপনার পাড়ার মিস্ত্রির বানানো বাড়িগুলো কতবছর অন্তর সারাই করতে হয়?
আমি এরকম অসংখ্য বাড়ি দেখেছি যেগুলোতে নির্মাণের পাঁচ-সাত বছরের মধ্যেই গভীর স্ট্রাকচারাল ক্র্যাক এসে গেছে, মাটির নীচ থেকে জল উঠে আসছে, জানলার কোনায় ফাটল ধরেছে, ছাদ দিয়ে ক্রমাগত জল পরছে, দেওয়ালে আড়া আড়ি ফাটল ফাটল ধরেছে, বৃষ্টির পর দেওয়ালে নোনা ধরে প্লাস্টার খসে পরছে এবং অসহায় হয়ে বাড়ির মালিক প্রতি তিন থেকে চার বছর অন্তর অন্তর পাড়ার সেই মিস্ত্রিকে ডেকেই ত্রিশ থেকে চল্লিশ হাজার টাকার অপব্যয় করছেন! তারা এসে ফাটলের জায়গা গুলোতে হাল্কা সিমেন্ট মেরে প্লাস্টার করে রং করে দিচ্ছে এবং বেশী নোনা ধরলে সেখানে টাইলস এনে বসিয়ে দিচ্ছে! ছাদ বসে গেলে সেখানটা ভেঙে লোহার আই বিম ঢুকিয়ে দিচ্ছে!
একদম যাচ্ছেতাই ব্যাপার আরকি! এগুলো কেন হচ্ছে জানেন?
কারন আপনার পাড়ার মিস্ত্রি বাড়িটা তৈরি করার সময় তার বাপ-দাদার কাছ থেকে শিখে আসা থাম্ব রুল ব্যবহার করে বাড়ির স্ট্রাকচারটা বানিয়েছেন! তিনি না করেছেন সয়েল টেস্ট, না মাথায় রেখেছেন ডিফারেন্সিয়াল সেটেলমেন্ট (Differential Settlement) এবং অনেক ক্ষেত্রে হয়তো DPC টাও ঠিক করে দেওয়া হয়নি! পুরোটাই প্রায় অনুমান ভিত্তিক! এবং সমস্যাটা হয় এই অনুমান ভিত্তিক স্ট্রাকচারাল ডিজাইনের জন্য আপনার নির্মাণের গুনমানই শুধু খারাপ হয়না, বাড়ি তৈরির খরচও অন্তত আট থেকে দশ শতাংশ বেড়ে যায়! উপর, নীচের তলা মিলিয়ে দুহাজার স্কোয়ার ফিটের বাড়ি তৈরিতে যদি আপনার খরচ হয় পঁচিশ লাখ তবে তার দশ শতাংশ মানে হল আড়াই লাখ!
অথচ প্রথমেই ঠিক করে স্ল্যাব, কলম, বিম এবং ফাউন্ডেশানের ডিজাইন করলে বছর বছর সারাইয়ের এই রেকারিং (Recurring) খরচটা অনেকটাই এড়ানো যায়! এবার মশাই গোটাটা হিসেব করে দেখুন তো, প্রথমত আপনার পাড়ার মিস্ত্রির ডিজাইন ফলো করে নির্মাণের ফলে আপনি কয়েক লক্ষ টাকার অপচয় করছেন নেগেটিভ স্পেস নির্মাণে, অনুমান ভিত্তিক নির্মাণ এবং সঠিক প্রযুক্তিবিদ্যার অভাবে গৃহ নির্মাণের খুরচ বেড়ে যাচ্ছে হুহু করে এবং তার উপরে আবার কয়েক বছর অন্তর সারাইয়ের উপরি খরচা! গোটাটা হিসেব করলে দেখবেন, দু-তলা মাঝারি সাইজের (আড়াই – তিন কাঠা জমির উপরে নির্মিত) একটা বাড়ির জন্যও আপনি বেশ কয়েক লাখ টাকার লোকসান খাচ্ছেন! এর উপর আবার প্রতি দশ বছরে সারাইয়ের খরচ ধরুন গড়ে আন্তত দেড় লাখ টাকা! এবার বলুন একজন স্থপতি যদি আপনার বাড়ির প্ল্যান, Sanctional Drawing/Municipal Drawing এবং স্ট্রাকচারাল ড্রয়িংয়ের জন্য লাখ খানেক টাকাও চার্জ করেন তবে সেটা কি খুব বেশী মনে হচ্ছে আপনার? সমস্যাটা হল, মানুষ আপাতদৃষ্টিতে কিছু টাকা সঞ্চয় করতে গিয়ে দূরের দিকে তাকিয়ে দেখেন না! বিষয়টা নিয়ে গভীরে ভেবে দেখেন না !
আর বিষয়টা কি শুধু টাকার?
একজন স্থপতিকে নিয়োগ করলে শুধু এই টাকার সাশ্রয় ছাড়াও আরো বহুরকম সুবিধা মেলে। যেমন ধরুন আমরা ডিজাইন করার সময় আপনার জমির অবস্থান, পারিপার্শ্বিক, নর্থ লাইন, আবহাওয়া ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় খেয়াল রেখে এমন ভাবেই ডিজাইনটা করার চেষ্টা করে থাকি যাতে ঘরের অভ্যন্তরে হাওয়া চলাচল হবে পর্যাপ্ত এবং প্রখর গ্রীষ্মেও বাড়ি থাকবে যথাসম্ভব ঠাণ্ডা (Heat Gain যথাসম্ভব কম হবে)!
একজন স্থপতিই পারেন গৃহ নির্মাণের বিভিন্ন টুকি টাকি বিষয়ে আপনাকে সঠিক ভাবে গাইড করতে। যেমন ধরুন, প্রখর গ্রীষ্মের দাবদাহ থেকে বাঁচতে বাড়ির উপরের তলার ছাদে হোয়াইট রুফ পেন্টিং করা যায়, ছাদের উপর উল্টানো মাটির ভাঁড় বসিয়ে সিমেন্টিং করা যায়, বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি শেডিং স্ক্রিন লাগানো যায়। সবথেকে ভালো হয় যদি বাড়ি তৈরি করার সময় দেওয়ালে ‘Rat Trap Bond’ ব্যবহার করা হয়। এই বন্ডিং শুধু সাশ্রয়ীই নয় , এক্ষেত্রে দেওয়ালের মাঝের ফাঁকা জায়গাটা ইন্সুলেশনের কাজ করে এবং ঘর ঠান্ডা থাকে।
আচ্ছা আপনি Fly Ash Brick এর নাম শুনেছেন? এই ইঁট গুলো সাধারণ পোড়া মাটির ইটের থেকে অনেকটাই সস্তা, হালকা, পরিবেশ বান্ধব এবং এদের Thermal Conductivity ও সাধারণ মাটির ইঁটের থেকে কম হয়। এই ইটের ব্যবহার করে আপনি আপনার নির্মাণ খরচ বেশ কিছুটা কমিয়ে আনতে পারেন। আচ্ছা, আপনি জানেন কি যে বাঁশকে সঠিক ভাবে ট্রিটমেন্ট করলে তার আয়ু হতে পারে পঞ্চাশ বছরেরও বেশী! এছাড়াও ছাদ ধালাই এবং ভিত নির্মাণের এমন অনেক পদ্ধতি আছে যেগুলো ব্যবহার করে শতকরা তিরিশ থেকে চল্লিশ শতাংশ সিমেন্ট এবং কংক্রিট বাঁচানো যায়! বিভিন্ন লো-কষ্ট (Low Cost) পদ্ধতির ব্যবহার করে প্রতি স্কোয়ার ফিটে একশো থেকে দেড়শো টাকা অব্দি নির্মাণে সাশ্রয় করা যায়। গোটা বাড়ির হিসেব করে দেখুন, টাকাটা খুব কম নয় কিন্ত! একজন দক্ষ স্থপতিই পারেন আপনাকে এই সমস্ত ব্যাপারে পথ দেখাতে!
মোদ্দা কথাটা হল, আপনি আপনার শরীরের বিশেষ প্রয়োজনে আপনি হাতুড়ে দেখাবেন নাকি ডাক্তার সেটা নিশ্চয়ই একান্তই আপনার ব্যক্তিগত পছন্দ! তবে বাস্তব ঘটনাটা একজন তরুন স্থপতি হিসেবে তুলে ধরা আমার কর্তব্য বলেই আমি মনে করি। এখানে আপনি প্রশ্ন করতে পারেন যে একজন স্থপতির নির্দেশ মেনে বাড়ি তৈরি করলেও তো কন্ট্রাক্টর টাকা মারবে এবং খারাপ গুনমানের জিনিস দিতে পারে । সেক্ষেত্রে কি করনীয়?
এক্ষেত্রে দুটো বিষয় আছে। এত ছোট প্রজেক্টের ক্ষেত্রে স্থপতিরা সাইটে প্রতিদিন ভিসিট করতে পারবেন না এবং এক্ষেত্রে স্থপতি যদি সাইটের দায়িত্ব নেন তবে ব্যাপারটা বাজেটে কুলবে না! কিন্ত সাথে সাথে এটাও মাথায় রাখতে হবে যে একজন স্থপতি আপনাকে আপনার বাড়ির ডিজাইনের সাথে সাথে ডিটেল স্ট্রাকচারাল ডিজাইন এবং ওয়রকিং ড্রইয়িংও সরবরাহ করবে। যেখানে লোহার রডের ডিটেল, তার বাঁধার পদ্ধতি সহ সিমেন্ট কংক্রিটের গ্রেড এবং গুনমানের নির্দেশ সহ সমস্ত কিছু দেওয়া থাকে। এছাড়াও একজন স্থপতি প্রতিদিন সাইট ভিসিট না করতে পারলেও অন্তত স্ল্যাব কাস্ট হবার দিন সাইট ভিসিটে এসে গোটা ব্যাপারটায় চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন। যেহেতু ড্রয়িংয়ে সমস্ত নির্দেশ, গ্রেড অফ সিমেন্ট/কংক্রিট, কত ডায়ার রড প্রয়োজন, লেআউট ইত্যাদি দেওয়া থাকবে তাই এক্ষেত্রে কন্ট্রাক্টর টাকা মারলে বা বাজে গুনমানের জিনিস দিলে সেটা ধরে ফেলা খুব সহজ হয়ে যায়। আর মশাই একবারই তো বাড়ি বানাবেন জীবনে, এটুকু সময় দিতে পারবেন না? আর একান্তই সময় দিতে না পারলেও কোন আসুবিধা নেই! আপনার পরিচিত কোন সিভিল ডিপ্লোমার ছাত্রকে বা সদ্য পাশ করা কোন ছেলেকে চুক্তিভিত্তিক দুমাসের জন্য রেখে দিন আপনার সাইটে যে প্রতিদিন একবার করে গিয়ে কাজের অগ্রগতি দেখে আসবে ঘণ্টাখানেকের জন্য। নিজের পরিচিত কেউ না থাকলে আপনার স্থপতির সাথে আলোচনা করুন।
ইদানিং অবশ্য শহরের দিকে প্রজেক্ট হলে আপনি সরাসরি আর্কিটেক্টের পরিচিত নির্ভরযোগ্য কন্ট্রাক্টরকে দিয়েই কাজ করাতে পারেন। আপনি চাইলে নিশ্চয়ই স্থপতিকে টার্ন কিই (Turn Key) প্রজেক্টের দায়িত্বও দিতে পারেন (এক্ষেত্রে শুরু থেকে শেষ অব্দি গোটা কাজটারই দেখাশোনার দায়িত্ব থাকে স্থপতির)। তবে গোটাটাই নির্ভর করছে আপনার সাধ্য এবং বাজেটের উপর।
শেষে আসি, যে বিষয়টা নিয়ে সাধারণ মানুষজন ভীষণ ধোঁয়াশার মধ্যে থাকেন এবং যার কথা ভেবে বেশীরভাগ মানুষ পিছিয়ে আসেন! একজন স্থপতি কনসাল্টেশান ফি হিসেবে কত টাকা চার্জ করতে পারেন? কাউন্সিল অফ আর্কিটেকচারের নির্দেশ অনুযায়ী একজন স্থপতি ছোট বাড়ির নির্মাণ কিম্বা সংরক্ষণের মত প্রজেক্টের ক্ষেত্রে– মোট প্রজেক্ট কষ্টের (Project Cost) পাঁচ থেকে সাড়ে সাত পারসেন্ট অব্দি চার্জ করতে পারেন। তবে কুড়ি তিরিশ লাখের থেকে ছোটখাটো প্রজেক্টের ক্ষেত্রে স্থপতিরা সাধারণত স্কোয়ার ফিটে চার্জ করে থাকেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে একজন স্থপতিকে তার দক্ষতা, অভিজ্ঞতা এবং কাজের ধরনের উপর নির্ভর করে স্কোয়ার ফিট প্রতি কুড়ি টাকা থেকে শুরু করে দেড়শো টাকা অব্দি চার্জ করতে দেখেছি। এর অনেকটাই আবার নির্ভর করে থাকে প্রজেক্টের ধরন, ক্লায়েন্টের চাহিদা এবং কাজের উপরও (Scope of Work)। এই কনসাল্টেশান ফি বা চার্জের বিষয়টা প্রজেক্ট শুরুর আগে স্থপতি এবং ক্লায়েন্ট– উভয়ে বোঝাপড়া করে ঠিক করে থাকেন এবং গোটা টাকাটা কিভাবে ধাপে ধাপে দিতে হবে সেটাও আগেই নির্ধারিত থাকে। এই বিষয়ে বিশদে জানতে, আগ্রহীরা ক্লিক করুন এই লিঙ্কে।
সবশেষে বলি আমাদের দেশ যেমন গরীব পিছিয়ে থাকা তথাকথিত তৃতীয় বিশ্বের অংশ, ঠিক সেরকমই ভারতবর্ষ হল পৃথিবীর অন্যতম উন্নয়নশীল অর্থনীতি! ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, আমাদের যতটা না টাকার অভাব তার থেকেও অনেক বেশী অভাব সচেতনতার! শিক্ষিত বাঙালিদের মধ্যেও একটা গরিষ্ঠ অংশের ধারনা হল স্থপতিদের কাজ হল ছবি আঁকা বা বিল্ডিংকে সুন্দর করে তোলা! ব্যাপারটা অত্যন্ত হাস্যকর হলেও এটাই সত্যি! আর এটাও সত্যি যে সাধারনের এই ধারনাকে ভাঙ্গার প্রয়াশও বিশেষ হয়নি! তাই অযথা সাধারণকে দোষারোপ না করে চেষ্টা করলাম গোটা বিষয়টা আপনাদের সামনে তুলে ধরার। আপনাদের ভালো লাগলে আপনার প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না! মনে রাখবেন– অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান– এই তিন অপরিহার্য বিষয়ের মধ্যে শেষেরটা একেবারেই হেলাফেলার নয়। ভালো থাকবেন। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন আমাদের, আমরা আপনাদের সাহায্য করব।
লিখেছেন অরুনাভ সান্যাল, কো- ফাউন্ডার ও এডিটর, স্থাপত্য।
ফিচার ইমেজ দিয়েছেন শুভায়ন এম, কো- ফাউন্ডার ও এডিটর, স্থাপত্য।
স্থাপত্য সাধারন মানুষের মধ্যে আর্কিটেকচার ও ডিজাইন নিয়ে সচেতনতা গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে বাংলা ভাষায় একমাত্র অনলাইন ম্যাগাজিন। আমাদের পাশে থেকে ও সমর্থন করে এই উদ্দেশ্য সফল করতে আমাদের সাহায্য করুন।
ওয়েবসাইট (Website) | ফেসবুক (Facebook) | ইন্সটাগ্রাম (Instagram) | লিঙ্কড-ইন (LinkedIn)
Get real time updates directly on you device, subscribe now.
Arunava graduated in Architecture from IIEST, Shibpur in May 2018. He recently acquired his Master's Degree in Rural Management (PGDRM) from the Institute of Rural Management, Anand (IRMA). He has an interest in Rural Sales, Marketing, and Consumer Behavior.
Arunava was a part of a National Team that won the ISB Invest-O-Pact by presenting a startup idea in the social impact space in ISB's Annual International Management Festival 2020. Arunava also won the Unknown Crafts Person Trophy, a national competition hosted by the National Association of Students of Architecture (NASA) in 2016. In the year 2018, Arunava co-founded Sthapatya (http://sthapatya.co/) which is India's first online magazine on Architecture in the Bengali Language.
Prev Post
Recover your password.
A password will be e-mailed to you.