স্থাপত্য পাবলিশার্স
বর্ধমান । কোন্নগর । কোলকাতা
Sthapatya Publishers
Burdwan | Konnagar | Kolkata
info.sthapatya@gmail.com
Shubhayan M: +918653792921
Arunava S: +9194323 43169
স্থাপত্য পাবলিশার্স
বর্ধমান । কোন্নগর । কোলকাতা
Sthapatya Publishers
Burdwan | Konnagar | Kolkata
info.sthapatya@gmail.com
Shubhayan M: +918653792921
Arunava S: +9194323 43169
Trending
Get real time updates directly on you device, subscribe now.
মাঝে কয়েকদিন খুব ব্যস্ত ছিলাম। লেখার সময় পাইনি। অথচ মাথার মধ্যে কতগুলো শব্দগুচছ, কতগুলো ভাবনা বুদ-বুদের মত ভেসে বেড়াচ্ছে। ফেটে যাবার আগে লিখে ফেলাই ভালো!
দিন কয়েক আগে পোর্টফোলিও বানানোর সময় ব্যাকগ্রাউন্ডে ‘আমার রবীন্দ্রনাথ‘ শুনছিলাম। চন্দ্রিলদা অসাধারন বক্তা! নিজের বক্তব্যকে এরকম ভয়ানক আত্মবিশ্বাসের সাথে প্রতিস্থাপনা করতে খুব কম মানুষকেই দেখেছি! শেষের দিকে শিল্প ও আধুনিকতার কথা উঠল। প্রসঙ্গ- রবীন্দ্রনাথ কেন আধুনিক নন! একটা শব্দ শুনে হঠাৎ করে সমস্ত ইন্দ্রিয়গুলো সচেতন হয়ে উঠল।
কি বলল? অ্যাঁ? ”কিউবিসম”! ঠিক শুনলাম তো!
বলে কি? এ তো আমার বিষয়। ক্লাসে ‘কিউবিসম’র সাথে স্থাপত্যের সম্পর্কটাই মূলত জেনেছিলাম। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে যে বৈপ্লবিক শিল্প ভাবনা জন্ম নেয়, তার প্রভাব অবশ্য শিল্পের সমস্ত মাধ্যমেই কমবেশি পরেছিল।
তবে আমাকে যে বিষয়টা নাড়া দিয়ে গেল সেটা কিউবিসমের প্রসঙ্গ নয়! বাঙালির মধ্যে নেই নেই করেও, আজও একটা সংখ্যালঘু অংশ শিল্পচর্চা করেন। সিনেমা, সাহিত্য, ভাস্কর্য বা সঙ্গীতের ইতিহাসে যে বৈপ্লবিক ভাবনা বা আন্দোলনগুলো ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে গেছে তার খোঁজও কেউ কেউ রাখেন। অথচ এর সমান্তরাল ভাবে স্থাপত্যের ইতিহাসেও যে ক্রমবিবর্তন ঘটেছে তার খোঁজ, একজন স্থপতি ছাড়া আর কজন রাখেন?
একজন চিত্রকর চাইলেই রঙ তুলির টানে কল্পনা কে ক্যানভাস বন্দী করতে পারেন। অথচ একজন স্থপতিকে জাগতিক নিয়ম গুলোর সাথে রীতিমত সমঝোতা করে শিল্প আর ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মেলবন্ধন ঘটাতে হয় কল্পনাকে বাস্তবের রুপ দিতে।
প্রসঙ্গ ক্রমে বলি, এই যে রবিবার গভীর রাতে প্রগতি ময়দানের ‘হল অফ নেশন’কে ভেঙ্গে ফেলা হল, একটা বাঙালিকে দেখেছেন এর প্রতিবাদ করতে? বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের মুখে শুনেছেন এই নিয়ে একটা শব্দ? বাংলার এই যে এত ‘প্রগতিশীল’ সংবাদপত্র– কটা শব্দ খরচ করেছে তারা?
আর মশাই, প্রতিবাদ! রাখুন তো! ‘হল অফ নেশন’ সেটা আবার কি? ‘রাজ রেওয়াল’– কে সে? খায় না মাথায় দেয়?
কেউ জানেই না! কেউ নামই শোনেনি! আপনি শুনেছেন বলুন?
আচছা ধরুন, কাল ঘুম থেকে উঠে শুনলেন যে নন্দলাল বসু কিম্বা যামিনী রায়ের অনেক গুলো ছবি কেউ নষ্ট করে ফেলেছে; বা ধরুন রামকিঙ্করের ভাস্কর্যগুলো বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ সরিয়ে ফেলছে! এভাবেই নির্লিপ্ত থাকবেন তো তখনও?
সমস্যাটা গভীর। বাঙালির যে সংখ্যালঘু অংশ ফাঁকা সময়ে আজও একটু আধটু শিল্প চর্চা করে, সময় পেলে নন্দন যায়– ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, নাটক, দু-চারটে আর্ট এক্সিবিশান দেখে তাদেরও স্থাপত্যের প্রাথমিক বিষয় গুলো নিয়ে হাতে-খড়ি হয়নি। সাধারনের কথা তো ছেড়েই দিন!
রবীন্দ্রনাথ একসময় স্থাপত্য নিয়ে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছিলেন। তার প্রভাবে হয়ত আজও শান্তিনিকেতনে শিল্পী ও অধ্যাপকের মধ্যে দেখেছি এই বিষয়ে কিছু আগ্রহ আছে। সেটুকু বাদ দিলে, গোটা বাংলা জুড়ে অবস্থাটা কিরকম জানেন?
তারাশঙ্করের ‘ডাইনি’ বলে একটা ছোট গল্প আছে। প্রথম পরিচেছদটা পড়ে নেবেন।
আসল সমস্যাটা কোথায় জানেন? এক রাতের মধ্যে নিমেষে যদি সমস্ত আর্কিটেক্ট বাংলা ছেড়ে চলে যায় তবে কারোর কিচছু যাবে আসবেনা! আগের মতই রাজু মিস্ত্রি বাড়ি বানাবে। আগের মতই শপিং মল উঠবে, হাউসিং উঠবে, শহরটা কনক্রিটের জঙ্গলে ভরে যাবে।
স্থাপত্য আবার হাতি ঘোড়া কি ব্যাপার? বাড়ি তো সবাই বানিয়েছেন। যে জিনিস গিন্নির তত্বাবধানে , পাড়ার মিস্ত্রির সহযোগীতায় নেমে যায় তার জন্য আবার স্পেশালিস্টের কি দরকার শুনি? আমার দাদু বীরভূমে জমি কিনে আধ ঘণ্টায় চুন দিয়ে বাড়ির প্ল্যান করে দিয়েছিলেন! সে সময় সবাই তাই করত!
একবার ভাবুন তো ড্রয়িং রুমে আপনি সগর্বে ক্লাস ওয়ানের হিজিবিজি আঁকা বাধিয়ে রেখেছেন। কেন? আঁকতে তো সবাই পারে! তার জন্য শিল্পীর তো প্রয়োজন নেই! কিম্বা, আপনি স্নানের সময় যে গান করেন সেই গানই মোবাইলে রেকর্ড করে শুনতে পারেন তো!
-শুনবেন?
শুনবেন না কারন আপনার মধ্যে নুন্যতম সুর ও তালের বোধ জন্মেছে ছোটবেলা থেকেই। আর স্থাপত্যের বিষয়ে শতকরা ৯৯% ক্ষেত্রে আনপ্ল্যানড বদ্ধ স্পেসে থেকে থেকে সাধারনের মধ্যে বোধটাই নষ্ট হয়ে গেছে!
যখন হাফ প্যান্ট পরতাম– অঞ্জন চৌধুরীর বউ সিরিজ দেখে ভেবেছি একেই বলে সিনেমা! পরে সত্যজিত, ঋত্বিক, মৃণাল সেনের ছবি দেখে ধারনাটা ভেঙ্গেছিল!
স্থাপত্যের বিষয়ে বাঙালির ধারনা ভাঙ্গা তো দূর, জন্মালই না! নাহলে আজকাল চারিদিকে ব্যাঙের ছাতার মত যে সব ফ্ল্যাট গুলো গজিয়ে উঠছে– ঘুপচি ঘুপচি ছোট ঘর, ততধিক ছোট জানলা– দুপুর বেলা ওভেনের মত গরম হয়ে ওঠে, হাওয়া নেই, আলো নেই, দশ ফুট লম্বা আলোবিহীন স্যাতস্যাতে করিডর– এগুলো কিভাবে মানুষ তার জীবনের সমস্ত সঞ্চয় জমিয়ে হাসিমুখে কিনছে! ভেবে দেখুন– সিনেমা দেখা, গল্পের বই বা গান শোনার ব্যাপারে আমরা কতটা খুঁতখুঁতে, অথচ যেখানে গোটা জীবনটা কাটাব যে স্পেসটা প্রতিদিন একটু একটুআমাদের উপর প্রভাব ফেলবে– তার ডিজাইনের ব্যাপারে আমরাই কতটা দায়সারা!
ঘরের অন্ধকার খুব ধীরে ধীরে মনের অন্ধকারের সাথে মিশে যায়। যেদিন ‘ঘর’ ও ‘বাহির’– দুটো আলাদা সত্তা নিবিড় ভাবে মিশে যাবে আপনার স্পেসে, সেদিন থেকেই জানবেন আপনার মনের মধ্যেও ‘ঘর’ ও ‘বাহিরের’ মধ্যে যে দেওয়ালটা আছে, তাতে প্রথম ফাটলটা ধরবে। এই কাজটা শুধু একজন দক্ষ স্থপতিই পারেন।
যুক্তি তক্কো আর গপ্পোর শেষ দিকটায় ঋত্বিক ঘটকের মুখে একখানা ডায়ালগ ছিল।
‘আমি পুড়ছি। ব্রম্ভান্ড পুড়ছে। সব পুড়ছে।’
সেদিন রাত্রে, এসিটা অন করে শোবার আগে শব্দ গুলো মাথার মধ্যে ঝনঝন করে উঠল! একটা খারাপ ডিজাইন শুধু আপনার মনন, চিন্তাশক্তি কিম্বা কর্মক্ষমতার উপরেই প্রভাব ফেলেনা। প্রতিদিন একটু একটু করে পৃথিবীটাকে নিঃস্ব ও রিক্ত করে দেয়! দায়িত্বজ্ঞানহীন অপচয় করতে করতে যেদিন এই পৃথিবীর সমস্ত জ্বালানী, সমস্ত পানীয় জল, সমস্ত বাতাস পুড়ে ছাই হয়ে যাবে, সেদিন হয়ত এই অজ্ঞানতা, এই নির্লিপ্তির কথা ভেবে আফসোস হবে!
লিখেছেন অরুনাভ সান্যাল, কো- ফাউন্ডার ও এডিটর, স্থাপত্য।
ফিচার ইমেজ সোর্স।
স্থাপত্য সাধারন মানুষের মধ্যে আর্কিটেকচার ও ডিজাইন নিয়ে সচেতনতা গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে বাংলা ভাষায় একমাত্র অনলাইন ম্যাগাজিন। আমাদের পাশে থেকে ও সমর্থন করে এই উদ্দেশ্য সফল করতে আমাদের সাহায্য করুন।
ওয়েবসাইট (Website) | ফেসবুক (Facebook) | ইন্সটাগ্রাম (Instagram) | লিঙ্কড-ইন (LinkedIn)
Get real time updates directly on you device, subscribe now.
Arunava graduated in Architecture from IIEST, Shibpur in May 2018. He recently acquired his Master's Degree in Rural Management (PGDRM) from the Institute of Rural Management, Anand (IRMA). He has an interest in Rural Sales, Marketing, and Consumer Behavior.
Arunava was a part of a National Team that won the ISB Invest-O-Pact by presenting a startup idea in the social impact space in ISB's Annual International Management Festival 2020. Arunava also won the Unknown Crafts Person Trophy, a national competition hosted by the National Association of Students of Architecture (NASA) in 2016. In the year 2018, Arunava co-founded Sthapatya (http://sthapatya.co/) which is India's first online magazine on Architecture in the Bengali Language.
Recover your password.
A password will be e-mailed to you.