স্থাপত্য পাবলিশার্স
বর্ধমান । কোন্নগর । কোলকাতা
Sthapatya Publishers
Burdwan | Konnagar | Kolkata
info.sthapatya@gmail.com
Shubhayan M: +918653792921
Arunava S: +9194323 43169
স্থাপত্য পাবলিশার্স
বর্ধমান । কোন্নগর । কোলকাতা
Sthapatya Publishers
Burdwan | Konnagar | Kolkata
info.sthapatya@gmail.com
Shubhayan M: +918653792921
Arunava S: +9194323 43169
Trending
Get real time updates directly on you device, subscribe now.
আমি কে? কি আমার পরিচয়? আমার শেকড় কোথায়? ছোট থেকে নামের পিছনে যে পদবীটা ব্যবহার করি, তারই বা অর্থ কি? এই প্রশ্নগুলো চিরকালই আমাকে ভাবিয়েছে। তাই লকডাউনের এই অনন্ত অবসরে, প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে গিয়েই আজকের এই লেখার অবতারণা করা।
প্রথমে ছোট্ট করে পটভূমিটা বলে নিয়ে তারপর বরং মূল গল্পে আসা যাক।
আজ থেকে অন্তত সতেরোশো বছর আগে, মানে গুপ্ত যুগেও এই বাংলায় ব্রাহ্মণদের বাস ছিল। এমনকি উত্তরবঙ্গ বা বরেন্দ্র অঞ্চলেও ব্রাহ্মণদের বসবাসের উল্লেখ পাওয়া যায়। যদিও সে সময় গোটা বাংলা জুড়েই বৌদ্ধ ও জৈন প্রভাব থাকায় এই ব্রাহ্মণদের, বাংলার সমাজ ও রাজনীতিতে সেরকম একটা প্রভাব ছিলনা বললেই চলে। বরং, সপ্তম শতাব্দীর শুরুতে শিব ভক্ত শশাঙ্কের আমল থেকে বাংলায় – বিহার, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ এবং সুদূর গুজরাট থেকেও ব্রাহ্মণরা ধীরে ধীরে মাইগ্রেট করতে শুরু করেন। কিংবদন্তী অনুযায়ী নবম কিম্বা দশম শতাব্দীতে আদিসুর কান্যাকুব্জ থেকে পঞ্চ গৌড়ীয় শাখার পাঁচজন বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণকে বাংলায় এনেছিলেন। এই আদিশূরের কিংবদন্তী নিয়ে অনেক প্রশ্ন থাকলেও এটুকু বলা যায় যে সেন আমলে ব্রাহ্মণরা বিশেষ প্রাধান্য পেয়েছিল এবং বাংলায় সান্যালদের (বাৎস গোত্রের) আদিপুরুষ সুধানিধি বা ছান্দোর এই সময় করেই এসেছিলেন। তার জমিদারী ছিল হরিকোটি, মেদিনীপুর এবং তিনি চতুষ্পাঠী স্থাপন করেন ত্রিবেণীতে।
এর পরের ইতিহাসটা একটু ধোঁয়াটে কারণ কিভাবে এই নবাগত বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণরা দক্ষিণবঙ্গের রাঢ় ভূমি ছেড়ে উত্তরের বরেন্দ্রভূমে গিয়ে উঠেছিল সেই নিয়ে অসংখ্য পরস্পর বিরোধী মিথ আছে। তবে এটুকু বলা যায় যে বল্লাল সেন (১০৮৩–১১৭৯) এই বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণদের উত্তরবঙ্গে ১০০ টা গ্রাম দান করেছিলেন।
ঠিক এই সময় করেই প্রথম সান্যাল পদবীর উল্লেখ পাওয়া যায়। বল্লাল সেন যে ৯ জন বারেন্দ্রী বামুনকে প্রথম কুলীনে উন্নীত করেছিলেন, তার মধ্যে অন্যতম ছিলেন বাৎস্য গোত্রের লক্ষ্মীধর সঞ্জীবনী বা লক্ষ্মীধর সান্যাল। বল্লাল সেনের প্রদত্ত ১০০টা গ্রামের মধ্যে প্রথমটাই ছিল সঞ্জীবনী। প্রসঙ্গত, বলে রাখা ভালো যে সান্যাল পদবীটা আদতে গাঁয়ী পদবী। অর্থাৎ, সান্যাল শব্দের কোন আক্ষরিক অর্থ নেই, এর উৎস হচ্ছে আদতে একটা গ্রামের নাম। তাই এই সঞ্জীবনী গ্রাম থেকেই লোকমুখে বিবর্তিত হয়ে সান্যাল পদবীর উদ্ভব হয়। বলিহার রাজবংশের কুলপঞ্জিকা অনুযায়ী এই সঞ্জীবনী গ্রামের অবস্থান ছিল অধুনা বাংলাদেশের নওগাঁ জেলায় (রাজশাহী)।
এরপর, বাংলার ইতিহাসে যে প্রবল পরাক্রমশালী সান্যালের উল্লেখ পাওয়া যায় তার নাম শিখাই/শিখীবাহন সান্যাল। ইনি ছিলেন অবিভক্ত বাংলার প্রথম সুলতান শামসুদ্দীন ইলিয়াস শাহের সমসাময়িক এবং পূর্বে উল্লিখিত লক্ষ্মীধর সান্যালের অধস্তন অষ্টম পুরুষ। শামসুদ্দীন যখন দিল্লীর সম্রাটের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণার ফন্দি আঁটছেন তখন অচিরেই বুঝতে পারেন যে কেবলমাত্র বাংলার মুসলিম সৈন্যদের উপর ভর করে দিল্লীর সাথে এঁটে ওঠা সম্ভব নয়। আসলে এর আগে যে সব বিদ্রোহীরা মাথা তুলেছিল তাদেরকে দিল্লীর সম্রাট খুব সহজেই দমন করেন এবং প্রথা অনুযায়ী বিদ্রোহ দমন হলে বিদ্রোহী সর্দারের মৃতদেহ থেকে চামড়া ছাড়িয়ে তা খড়ের পুতুলে টাঙ্গিয়ে দিল্লী অব্দি প্রদর্শন করানো হত। চতুর শামসুদ্দীন অনুভব করেন যে দিল্লীর সম্রাটের বিরুদ্ধে মাথা তুলতে গেলে বাংলার প্রভাবশালী ভূস্বামীদের সাহায্য অত্যন্ত প্রয়োজন। ঠিক এই জন্যই তিনি বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রভাবশালী শিখীবাহন সান্যাল (গ্রাম – দামনাশ) এবং শ্রীকৃষ্ণ ভাদুড়ীর তিন ছেলের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন। এই দামনাশ গ্রামটাকে আজও ট্র্যাক করা যায় যার অবস্থান আজকের বাগমারা, রাজশাহীতে। এই গ্রামে দেশভাগের আগে অব্দিও সান্যাল জমিদারের বাস ছিল। শিখীবাহন শব্দের অর্থ দেবসেনাপতি কার্তিক।
কিংবদন্তী অনুযায়ী দিল্লীর সাথে যুদ্ধে জয়ী হলে ইলিয়াশ শাহ খুশি হয়ে সান্যালদের চলন বিলের উত্তরে ও দক্ষিণে বিশাল জায়গীর এবং খাঁ উপাধি দিয়েছিল। পরবর্তীকালে, এই শিখাই সান্যালের বংশধররাই সাতোড়/সাতৈর/সান্তোল রাজবংশের প্রতিষ্ঠা করেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে ভাদুড়ীরা খাঁ উপাধি বহন করলেও শিখাই সান্যালের বংশধর’রা কুলীন হওয়ার গর্বে এই খাঁ উপাধির ব্যবহার করেন নি। বেশিরভাগ ঐতিহাসিকের মতে এই সাতোড় (পরবর্তীকালে সান্যালগড়) রাজ্যের অবস্থান ছিল রাজশাহী জেলায় চলন বিলের উত্তর ও দক্ষিণে। কেউ যদি গুগল ম্যাপে জায়গাটা ভালো করে লক্ষ্য করেন তবে বুঝতে পারবেন যে, সেসময় এই অঞ্চল দিয়েই পদ্মার মুখ্য উত্তরবাহিনী শাখা প্রবাহিত হত আত্রাই নদীর বুক দিয়ে। পরবর্তীকালে ১৭৮৭ সালে তিস্তা তার প্রাচীন নদীগর্ভ থেকে ভেঙ্গে বেরিয়ে আসার ফলে আত্রাই তার গুরুত্ব হারায়। কিন্ত যে সময়ের কথা বলছি তখন এই নদী ও তার পার্শ্ববর্তী সমস্ত গ্রামগুলো ছিল অত্যন্ত সমৃদ্ধ এবং স্ট্র্যাটেজিক্যালি ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। এখানে সান্যালদের সাথে সাথে যে ভাদুড়ী বংশের উল্লেখ পাওয়া যায় , তাদের বংশেই জন্মগ্রহন করেছিলেন তাহেরপুরের বিখ্যাত রাজা কংসনারায়ণ (যিনি পূর্ববঙ্গে সার্বজনীন দুর্গাপুজোর প্রচলন করেন) , বাংলার শেষ হিন্দু রাজা গনেশ এবং কুখ্যাত কালাচাঁদ রায় বা কালাপাহাড় ।
যাইহোক, প্রসঙ্গে ফেরা যাক। এই শিখীবাহন সান্যালের পুত্র বলাই সান্যাল ছিলেন সাতোড়ের রাজা, এবং কনিষ্ঠ পুত্র সত্যদেব বা প্রিয়বান ছিলেন নবাবের সেনাপতি। আসলে সে সময় হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাস ছিল না, তাই নবাব ইচ্ছে করেই হিন্দু সেনাপতির তলায় মুসলিম সৈন্য এবং মুসলিম সেনাপতির অধীনে হিন্দু সেনাদের রেখেছিলেন যাতে বিদ্রোহের আশঙ্কা কম থাকে। এরপরের ইতিহাস নিয়ে বিশদে আলোচনা করার মানে হয়না কারণ সময়ের সাথে সাথে এই সাতোড় রাজবংশ বিভিন্ন ছোট ছোট জমিদারিতে ভেঙ্গে যায় এবং রাজশাহীর এই সান্যাল জমিদারদের অনেকেই রায়/চৌধুরী/মজুমদার ইত্যাদি বিভিন্ন উপাধি গ্রহন করেছিলেন। বাংলার মধ্যযুগের ইতিহাসে এরকম অসংখ্য সান্যাল জমিদারের উল্লেখ আছে। এখানে শুধুমাত্র দুজন উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্বের উল্লেখ করব। বাংলার শেষ হিন্দু রাজা গনেশের (১৪১৫- ?) সমসাময়িক সাতোড়ের রাজা অবনীনাথ সান্যালের উল্লেখ পাওয়া যায়, যার কন্যার সাথে গনেশের পুত্র যদুনারায়ণের বিয়ে হয়েছিল। এছাড়াও আকবরের (১৫৫৬-১৬০৫) সমসাময়িক সাতোড়ের রাজা রামকৃষ্ণ সান্যালের উল্লেখ পাওয়া যায় যিনি তৎকালীন বারো ভুঁইয়াদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। টোডোরমল (১৫৫০-১৫৮৯) তার লেখায় এনাকে নৃপতি সামন্ত বলে উল্লেখ করেছেন। এরপর সপ্তাদশ – অষ্টাদশ শতাব্দীতে অসংখ্য ছোট ছোট পরগনা ভিত্তিক জমিদারের উদ্ভব হয় যাদের আলাদা আলাদা বংশলতা আজও ট্র্যাক করা সম্ভব।
এই হল মোটামুটি সান্যাল পদবীর গোড়ার ইতিহাস। এর আগে সান্যালদের ইতিহাস নিয়ে এরকম কমপ্রিহেন্সিভ লেখা হয়েছে বলে জানা নেই। তাই শেষে কয়েকটা মন্তব্য করার লোভ সামলাতে পারলাম না ।
১। সম্প্রতি দু একজন দাবী করেছেন যে এই সেনলাল পদবী/গ্রাম থেকেই সান্যাল এসেছে। এর কোন ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই। আমার ধারণা ঘটনাটা বরং উল্টো। সেনলাল পদবীর লোকজন সান্যাল পদবীর সাথে মিশে গেছে কালক্রমে।
২। খুব রেয়ার কেসে সান্যাল সাবর্ণ বা শাণ্ডিল্য গোত্রও হয়ে থাকেন। এরা সম্ভবত রাঢ়ী ব্রাহ্মণ ছিলেন অনেক প্রজন্ম আগে। পরবর্তীকালে উত্তরবঙ্গে মাইগ্রেট করার পর, সান্যালকে উপাধি হিসেবে পেয়েছেন। বলিহার রাজবংশের ইতিহাসেই সান্যালকে উপাধি হিসেবে ধারন করার দৃষ্টান্ত আছে। এছাড়াও বাংলাদেশে, সান্যাল পদবীধারী জমিদারদের কুলপঞ্জিকা ঘাঁটলে দেখা যায় যে তাদের আদিপুরুষের পদবী ছিল মিশ্র, শর্মা, ভট্ট বা আচার্য। পরবর্তীকালে গ্রামের নাম থেকে ধীরে ধীরে সান্যাল পদবী এসেছে। এছাড়াও বাংলার জাতীয় ইতিহাস গ্রন্থে উল্লেখ আছে যে গুনাইগাছা গ্রামের ঢোল পদবীধারী ব্রাহ্মণ বংশ থেকে সলপের সান্যাল জমিদার বংশের উদ্ভব হয়। তাই সম্ভবত সে সময় সান্যালকে উপাধি হিসেবেও নেওয়া বা দেওয়ারও রেওয়াজ ছিল।
৩। সতীশচন্দ্র মিত্র তার যশোর খুলনার ইতিহাস বইতে লিখেছেন যে সাতোড় রাজ্যের অবস্থান ছিল আজকের ফরিদপুরে। সংস্কৃতে একে সান্তালি বলা হত, আর এই সান্তালি হল আদতে বৈদিক ব্ৰাহ্মণের একটা প্রধান সমাজ। এর থেকেই সাতৈর, সতৈল বা সাতোড় ইত্যাদি বিভিন্ন নামগুলো এসেছে। আমি যদিও খোঁজাখুঁজি করে, সান্তালি নামে কোন বৈদিক বামুনদের শাখা নিয়ে বিশেষ কিছুই পাইনি। এই নিয়ে আপনারা কেউ জানলে মন্তব্য করতে পারেন। আগেই বলেছি যে বল্লাল সেন প্রায় ১০০ টা গ্রাম দান করেছিলেন যার মধ্যে আজকে মাত্র ৫-৬ টা পদবী হিসেবে টিকে আছে। বাকিগুলো বিভিন্ন সময়ে এই পদবীগুলোর সাথেই মিশে গেছে ।
ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারি উপজেলায় সাতৈর নামে সত্যিই একটা গ্রাম আছে যেখানে আলাউদ্দীন হোসেন শাহের নির্মিত প্রায় ৬০০ বছরের পুরনো এক বহু প্রাচীন মসজিদ রয়েছে ।
চলন বিল : বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ জলাভূমি অঞ্চল । এই বিলের আশে পাশের অঞ্চলেই উত্থান হয়েছিল অসংখ্য বরেন্দ্রী জমিদারদের । মধ্যযুগে এর আয়তন ছিল প্রায় ১০০০ বর্গ কিলোমিটার । (ছবির সোর্স – https://en.prothomalo.com/lifestyle/travel/chalan-beel-in-autumn)
৪। সান্যাল, মৈত্র, ভাদুড়ী, বাগচী ও লাহিড়ীরা বরেন্দ্রী ব্রাহ্মণ নামে পরিচিত। এই প্রত্যেকটা পদবীই আসলে গাঁয়ী পদবী। আর বরেন্দ্র শব্দটা সম্ভবত – বারোজন ইন্দ্র (রাজা) কিম্বা বারিন্দ (প্রাচীন পলি ও লাল মাটি গঠিত অঞ্চল যা পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের থেকে কিছুটা উঁচু) শব্দ থেকে এসেছে। মধ্য যুগে গোটা বরেন্দ্র ভূমি জুড়ে বিশাল বিশাল অগভীর ঝিল বা হাওড় জাতীয় জলাভূমি ছিল।
৫। বরেন্দ্রীদের মধ্যে কেউ কেউ জলদস্যুবৃত্তি করত এবং মদ-মাংস সহ কালী সাধনা করত বলেও উল্লেখ আছে। সলপের সান্যাল বংশের জলদস্যুবৃত্তির গল্প আজও চলনবিল অঞ্চলের লোকের মুখে মুখে ফেরে। কথিত আছে যে চলন বিলের বিখ্যাত পণ্ডিত ডাকাত বেনী রায়ের পত্নী শংকরী ছিলেন সাতোড়ের সান্যাল বংশের কন্যা। এছাড়া বেনী রায়ের এক শাকরেদ ছিলেন যুগলপ্রসাদ সান্যাল (কালো যোগলা) যাকে মানসিংহের ভাই ভানুসিংহ, বগুড়া জেলার শেরপুরে জমিদারি প্রদান করেছিল । এরা দস্যু হলেও আদতে ছিলেন রবিনহুডের মত যারা তৎকালীন মুঘল শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ও মুক্তাঞ্চল গড়ে তুলেছিলেন ।
৫। নদিয়ার চাকদা থানার অন্তর্গত সান্যালচর নামে একটা জায়গা আছে ভাগীরথীর তীরে। যদিও এর ইতিহাস নিয়ে আমার বিশেষ ধারণা নেই । তবে এই মুহূর্তে নদিয়া এবং উত্তরবঙ্গ অঞ্চলে বহু সান্যাল বাস করেন । এরা দেশ ভাগের আগে পরে বিভিন্ন সময়ে মাইগ্রেট করেছিলেন । তাছাড়া, নদিয়াকে একসময় প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলা হত । বল্লাল সেনের সমসাময়িক লক্ষ্মীধর সান্যাল থেকে হিসেব করলে আজকের সান্যালরা অন্তত ৩৫-৪০ টা প্রজন্ম পেরিয়ে এসেছে । তাই এদের পরিবারের কেউ সম্ভবত বহু প্রজন্ম আগে বিদ্যাচর্চা করতে এসে নদিয়ায় থেকে গেছেন ।
৬। এই সঞ্জামিনী গ্রামের নাম থেকে কিভাবে বিবর্তিত হয়ে সান্যাল পদবীটা এল সেই নিয়ে অরুপম সান্যাল একটা ব্যাখা করার চেষ্টা করেছেন । সঞ্ যামিনী যদি গ্রামের নাম হয়ে থাকে তবে সেক্ষেত্রে – সঞ্ যামিনী > সঞ্ ইয়া মিনী > সঞ ইআইনি-আল > সঞ্ ইআল > সন্যাল … এরকম একটা বিবর্তন হয়ে থাকতে পারে । আল প্রত্যয় অনেক সময় এলাকা বোঝাতে ব্যবহৃত হয় ।
এছাড়া বাংলার সামাজিক ইতিহাস বইতে লেখা আছে যে সঞ্জামিনী গ্রামকে ছোট করে আঞ্চলিক ভাষায় সানি বা সান্ডি গ্রাম বলে ডাকা হত । সেখান থেকে ‘আল’ প্রত্যয় জুড়ে সময়ের সাথে সাথে সান্যাল শব্দটা এসেছে ।
শেষ অংশে এসে একটা কথাই বলব। লেখাটা একটু মন দিয়ে পড়লেই খেয়াল করবেন যে গোটা ইতিহাসটাই আবর্তিত হয়েছে রাজশাহী এবং ফরিদপুর জেলাকে কেন্দ্র করে। আমাদের পরিবারের আদিবাড়িও ছিল এই ফরিদপুর জেলার হোগলা গ্রামে। আমার ধারণা সান্যালদের আদি বাসভূমি সঞ্জীবনী গ্রামটা আজকের চলনবিলের আশে পাশেই কোথাও একটা ছিল। কালের নিয়মে আজ আর তাকে খুঁজে পাওয়া যায়না। তবে জেমস রেনেলের ১৭৮৬ সালের ম্যাপে চলনবিলের দক্ষিণে সুরুঞ্জার, সিংপাইন, সিন্দ্রাই নামে বেশ কিছু গঞ্জের উল্লখ আছে। হতে পারে এর সাথে সাতোড় বা সঞ্জীবনী গ্রামের কোন যোগসূত্র আছে। তবে বাঙালি ইতিহাস বিস্মৃত জাতি। দেশভাগের ক্ষত, দাঙ্গার স্মৃতি আজও পূর্ববঙ্গের প্রত্যেকটা রিফিউজি পরিবারের বুকে এত বড় ঘা ফেলে গেছে যে তার আগের সমস্ত ইতিহাসকে আমরা সচেতন ভাবেই ভুলতে চেয়েছি। তাই আজ আর এই রহস্যের সমাধান করা সম্ভব নয়। পূর্ব বঙ্গের হিন্দুদের লক্ষাধিক একর জমি, জীর্ণ জমিদার বাড়ি, ভগ্ন মন্দির, শুকিয়ে যাওয়া তুলসীমঞ্চকে বাংলাদেশ সরকার শত্রু সম্পত্তি হিসেবে বাজেয়াপ্ত করেছে। তার সাথে সাথেই হারিয়ে গেছে বংশলতিকা , আচার , অভ্যাস সহ একটা গোটা জাতির সামাজিক ইতিহাস।
বরেন্দ্রীদের একটা গরিষ্ঠ অংশই দেশভাগের পর নিজের বাপ দাদার ভিটেমাটি ছেড়ে এপার বাংলায় এসেছেন। তাই যারা ওপার বাংলা থেকে এপার বাংলায় এসেছেন তারা নিজেদের গ্রামের নাম ও জেলা কমেন্টে লিখতে পারেন। সান্যালরা ঠিক কোন অংশ থেকে বেশি মাইগ্রেট করেছেন সে বিষয়ে একটা স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে।
আজকের মত এটুকুই । ভালো থাকবেন ।
তথ্যসূত্র : ১। বাংলার সামাজিক ইতিহাস (দুর্গাচন্দ্র সান্যাল) , ২। বঙ্গের জাতীয় ইতিহাস – বারেন্দ্র ব্রাহ্মণ বিবরণ (নগেন্দ্রনাথ বসু) , ৩।বাংলায় ভ্রমন (অমিয় বসু) , ৪। বৃহৎ বঙ্গ (দীনেশচন্দ্র সেন) , ৫। সরল বাঙালা অভিধান (সুবলচন্দ্র মিত্র) , ৬। বংশ পরিচয় (জ্ঞানেন্দ্রনাথ কুমার) , ৭। উইকিপিডিয়া , ৮। জেমস রেনেলের ম্যাপ , ৯। জীবনী কোষ (দ্বারকানাথ বসু) , ১০। গৌড়ের ইতিহাস (রজনীকান্ত চক্রবর্তী) , ১১। Social Identity of the Zamindars of Rajshahi (Shodhganga) , ১২। প্রবাসী , প্রথম খণ্ড (বেতালের বৈঠক মীমাংসা) , ১৩। যশোহর খুলনার ইতিহাস, দ্বিতীয় খণ্ড (সতীশচন্দ্র মিত্র)
বিঃদ্রঃ – এই লেখাটা পড়ে আপনারা যারা নিজেদের পদবীর ইতিহাস নিয়ে জানতে চাইছেন তাদের সবাইকে অনুরোধ করব – বঙ্গের জাতীয় ইতিহাস (নগেন্দ্রনাথ বসু) , বংশ পরিচয় (জ্ঞানেন্দ্রনাথ কুমার) , জীবনী কোষ (দ্বারকানাথ বসু) , আমাদের পদবীর ইতিহাস (লোকেশ্বর বসু) , পদবীর উৎপত্তি ও ক্রমবিবর্তনের ইতিহাস (খগেন্দ্রনাথ ভৌমিক) , বৃহৎ বঙ্গ (দীনেশচন্দ্র সেন) – এই বইগুলো দেখুন । সব কটা বই ডিজিটাল/পিডিএফ হিসেবে আপলোড করা আছে ইন্টারনেটে। গুগুলে গিয়ে বাংলায় আপনার পদবী টাইপ করেও সার্চ করে দেখতে পারেন । অনেক অজানা তথ্য জানতে পারবেন । তাছাড়া আমাদের ফেসবুক পেজ ফলো করুন । আমরা বিভিন্ন পদবীর ইতিহাসের উপর পোস্ট করব ভবিষ্যতে ।
আমাদের লেখা ভালো লাগলে অনুগ্রহ করে পেজের (ডান দিকে) যে লাল রঙের বেল আইকনটি আছে তাতে ক্লিক করুন যাতে পরবর্তীকালে আমরা এই নিয়ে পোস্ট করলে আপনার মোবাইলে তার নোটিফিকেশন যায় ।
তথ্যসূত্র হিসেবে নীচে বিভিন্ন বই থেকে তোলা স্ক্রিনশট দিলাম । সান্যাল নিয়ে আগ্রহীরা দেখতে পারেন …
লিখেছেন অরুনাভ সান্যাল, কো- ফাউন্ডার ও এডিটর, স্থাপত্য।
স্থাপত্য সাধারন মানুষের মধ্যে আর্কিটেকচার ও ডিজাইন নিয়ে সচেতনতা গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে বাংলা ভাষায় একমাত্র অনলাইন ম্যাগাজিন। আমাদের পাশে থেকে ও সমর্থন করে এই উদ্দেশ্য সফল করতে আমাদের সাহায্য করুন।
ওয়েবসাইট (Website) | ফেসবুক (Facebook) | ইন্সটাগ্রাম (Instagram) | লিঙ্কড-ইন (LinkedIn)
Get real time updates directly on you device, subscribe now.
Arunava graduated in Architecture from IIEST, Shibpur in May 2018. He recently acquired his Master's Degree in Rural Management (PGDRM) from the Institute of Rural Management, Anand (IRMA). He has an interest in Rural Sales, Marketing, and Consumer Behavior.
Arunava was a part of a National Team that won the ISB Invest-O-Pact by presenting a startup idea in the social impact space in ISB's Annual International Management Festival 2020. Arunava also won the Unknown Crafts Person Trophy, a national competition hosted by the National Association of Students of Architecture (NASA) in 2016. In the year 2018, Arunava co-founded Sthapatya (http://sthapatya.co/) which is India's first online magazine on Architecture in the Bengali Language.
Prev Post
Recover your password.
A password will be e-mailed to you.
চমৎকার লেখা। Very well-researched and thanks for the footnotes. My name is Jayanta Sanyal and I was always told, growing up in Kolkata, that my ancestors hailed from Sholop – Gobindapur which probably falls in the Pabna district in Bangladesh now. It felt nice to be validated by your scholarship. On a humorous note, my father had once started researching our roots many years ago but gave up when he discovered that the Sholop Sanyals frequently engaged in less than honorable activities like abduction and robbery just like you’ve noted😀.
Keep up the good work!
Jay Sanyal
সলপের সান্যালরা দস্যু হলেও আদতে ছিলেন রবিনহুডের মত যারা তৎকালীন মুঘল শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ও মুক্তাঞ্চল গড়ে তুলেছিলেন । এদের সাথে মুসলমান হানাদারদের অহি-নকুল সম্পর্ক ছিল । সেসময় বাংলার সামাজিক অবস্থা এমনই ছিল যে বরেন্দ্রীরা শাস্ত্র ছেড়ে শস্ত্র ধারন করেছিল ।
Great! Very well written, informative and rich in statistics! I appreciate your writing very much, by the way our ancestral place was situated in Rajsahi, Salap Bangladesh and now in North Bengal
My name is shyamalendi sannyal (Talukfer). Live in baguiati kolkata.
We are from alanga Tangail and before
Salaps sannyal.
Dear Arunava, you have just splendidly expressed out our ancestral evolution and history. I feel proud of you. Now I am at Kolkata. We are from rashahi, ghoramara area, padma river was not far away from our ancestral house, as heard from my late Sri Nirmal Chandra Sanyal, advocate, rajshahi Court, my grand father was Sri Hemchandra Sanyal, was advocate of rajshahi court, our jamindari was probably in shirol or something like, today I forgot, as my father, mother, eldest brother ( Late Utpal Sanyal) are no more in this world. As I could remember from our friends of kolkata, our pucca house still there. We straight way came to Kolkata Tollygunge. Sulekha Company of jadavpur, Maitra family was from rajshahi. I must cooperate you in this matter, if at all I could gather something. I have just retired from SAIL, as DGM( BE, M.Tech chemical engineer)
Once again I bless you from my heart, for your hardship and endeavor.
Mobile 8986870212
Amar babar bari chilo Ransahir Chamari grame and maar bari chilo Dighapati grame. Amar thakurdar name Late Priyanath Bagchi and dadur name Late Manindra Kumar Maitra. Dujonei Rajsahi Loknath High School er teacht chilen. Dujonei Presidency Colleger student.
Osadharon kaj korecho dada ..onkdin dhorei Sanyal niye onk itihas khuje beriyechi kintu paini..amader purono bari rajsahi te..Amar dadu okhanei jonmechen. Ghor Bari sob chere 1948 e amra chole asi ekhane. Wonderful job dada
My maternal uncle Late. Tarun kamal Bagchhi was student of both of your grandfathers. He was a brilliant student of Loknath High School, I have some prize book of his still in my possession. He was an E. Rly official, apprentice of KPA technical School. He left us untimely.
Secondly we may propose a joint Barendra Platform with Stuerdship of Arunava. He is known to my son Eeshan, from IIT/KGP.
Awesome writings.anek kichu jantam nA. Jante parlam lekhata pore. Thanks for your research .
ছোট বেলায় মা’র রাগ হলে বকা খেতাম জামাই খুনে ডাকাতের বংশের মেয়ে বলে! বড় হয়ে জানতে পেলাম আমার প্রয়াত দাদুর কাছে সলপের সান্যাল বংশের মেয়ে আমি। উত্তরবঙ্গের ইতিহাসে ও এই ঘটনার উল্লেখ আছে! সত্যি যেটা শত – হাজার বছর এমনকি আজও রাজা, জমিদার, জোতদার, মিলিয়ন বিলিয়নপতিদের সম্পদ আহরণের উদাহরণত এমনই! তবু নিজের অতীতের প্রতি আকর্ষণ বোধ করি। সলপে যাই। ভাঙ্গাশিব মন্দির, রাণীভবানির দানকরা কালীমূর্ত্তি (যাআজ আরনেই)র ভগ্নপ্রায়মন্দিরের গায়ে শ্বেতপাথরের শিলালিপি, কারুকাজ নস্টালজিক করে তোলে। সান্যালদের প্রতিষ্ঠা করা হাইস্কুল, হাট এগুলো প্রমাণ করে খারাপের পাশে ভালো কাজ ও কিছু ছিল! সুযোগ পেলে পরবর্তী তে ছবিগুলো দেখানোর চেষ্টা করবো।
Splendid and awesome research work.
I am really curious about my Title as BAGCHI.
I just got some info here. If possible please share more info if you have about BAGCHI.
Our family used to belong from Sholop, Pabna. It was a good read. Nice effort. Another thing in common with author is I, myself also belong from IIEST( formerly BESU).
Dada.. Salap er Sanyal (5th point & 6th point) er ekta branch bibaho sutre Howrah r Shalkia te jomidari pan. Ghanulal Sanyal (Hirasundori debi- wife od Ghanulal Sanyal). Ei jomidari te kichu modir o sthapon koren. Eirkm e ekta shib mondir Jhakardaha te ry6e.. ekhno every year pujo o mela hy.. Howrah theke Sundarban puro chor tai Sanyal der jomidari vukto chilo.ekhon ogulo khas jomi.. Chakdah tao kichuta jani.. reply pele abar likhbo..
Hello. Can you kindly provide your email id?
Recently I have received the following email from Joy Sanyal (jsanyal@gmail.com):
__________________________________________________________________________________
Dear Arunava,
hope you are safe and have been keeping well. I have a small request. I have noted that your blog on the history of the Sanyals has received a mail from a certain Sayan Sanyal from Howrah/Salkia. If possible, can you please send me his email? As you know, my 6th great grandfather migrated to Varanasi from Howrah/Salkia where his siblings lived. I would like to contact Sayan to learn more about his side of the story as I believe that some members of the family may still be living in that area.
Your blog has certainly become a very useful tool for my research and I am grateful for the information provided.
Many thanks.
________________________________________________________________________________
You may post your email id here or directly contact Joy Sanyal in the above-mentioned email.
আপনার লেখাটা পড়ে সত্যিই খুব ভালো লাগলো। আমার জেঠুর কাছে শুনেছিলাম আমাদের গ্রামটি ছিল বাংলাদেশের গৌরনদী জেলার কটকস্তল গ্রামে। এখনো সেখানে 400 বছরেরও পুরোনো বার্থী তারা মায়ের মন্দির ও গ্রামটি উপস্থিত আছে। আমার বাবার ঠাকুরদা ও তাঁর পূর্ব-পুরুষেরা এই মন্দিরে বংশ পরম্পরায় পৌরোহিত্য করত। আমাদের বাড়িটি ছিল বংশ পরম্পরায় দেবোত্তর সম্পত্তি। আমার ঠাকুরদা ও তাঁর ভাইরা, জেঠু স্বাধীনতা পরবর্তী দেশভাগের সময় উত্তর 24 পরগনার ভাটপাড়ায় চলে আসে। আমি বেশ কিছুদিন আগে ফেসবুকে বার্থী কালী মন্দির ও কটকস্তল গ্রামের ব্যাপারে বিশদে জানতে পারি। তবে এখনো কোনো সান্যাল পদবী ওখানে আছেন কিনা বা মন্দিরে পুরোহিতদের পদবী কি সেটা আমার ঠিক জানা নেই। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে একবার যাওয়ারও ইচ্ছে আছে। ভালো থাকবেন।
Very nice & informative. লাহিড়ী পদবীর ইতিহাস জানার ইচ্ছা রইল
Great information….Kudos for your research… we are also Sanyals, although we have been using Bhattacharjee for quite a few generations now. we come from erstwhile Faridpur district (now Shariatpur district). Is it really possible to trace ancestry using surname in todays situation?