স্থাপত্য পাবলিশার্স
বর্ধমান । কোন্নগর । কোলকাতা
Sthapatya Publishers
Burdwan | Konnagar | Kolkata
info.sthapatya@gmail.com
Shubhayan M: +918653792921
Arunava S: +9194323 43169
স্থাপত্য পাবলিশার্স
বর্ধমান । কোন্নগর । কোলকাতা
Sthapatya Publishers
Burdwan | Konnagar | Kolkata
info.sthapatya@gmail.com
Shubhayan M: +918653792921
Arunava S: +9194323 43169
Trending
Get real time updates directly on you device, subscribe now.
২০১৭ সালের আগস্টে, মাস খানেকের জন্য দক্ষিণ উড়িষ্যার পাহাড় জঙ্গল ঘেরা, মাওবাদী অধ্যুষিত এক প্রত্যন্ত জায়গায় দিন কাটানোর অভিজ্ঞতা হয়েছিল। এই নিয়ে আগেই লিখেছি। আজ দ্বিতীয় পর্ব।
জায়গাটার নাম মুনিগুদা। ছোট্ট জনবসতি। আমার বস ছিলেন এই মুনিগুদায় নির্মীয়মাণ কৃষি বিদ্যালয়ের মূল স্থপতি। সেই সূত্রেই এখানে আসা। আশে পাশে মাইলের পর মাইল ঘন জঙ্গল আর উঁচু উঁচু পাহাড়। কখনো কখনো আবার বিস্তীর্ণ ঊষর জমি। আমাদের সাইটটা ছিল লোকালয় থেকে সাত আট কিলোমিটার দূরে এক বিশাল প্রান্তরের মাঝে। যেদিকে দুচোখ যায় সেদিকেই ধুধু করছে জমি আর কাঁটাঝোপ। আমাদের থাকার ব্যবস্থা হয়েছিল ক্লায়েন্টের নিজস্ব গেস্ট হাউসে। রাত নামতেই সেখানে আশে পাশের জঙ্গল থেকে এক টানা ঝি ঝি পোকার ডাক আর ঝাঁঝালো বুনো ফুলের গন্ধ ভেসে আসে। সন্ধ্যের পর দরজা জানলা সব বন্ধ করে দিতে হয়, নাহলে জঙ্গুলে পোকার উপদ্রবে টেকাই দায় হয়ে যায়।
এক সপ্তাহ কাটানোর পর মোটামুটি কাজের খুঁটি নাটি বুঝিয়ে, সমস্ত ড্রয়িং আমার হাতে দিয়ে, বস কোলকাতায় ফিরে গেলেন।
ভদ্রলোক ফিরে যাবার পর, সময় যেন আর কাটতেই চায়না! দুটো মনের কথা বলার মানুষ নেই, সাইটে মোবাইলের টাওয়ার নেই, এমনকি বাংলা বোঝে এমন মানুষের সংখ্যাও হাতেগোনা। সারাদিন বই হাতে গাছের ছায়ায় বসে থাকি। মিস্ত্রীরাও ঢিমেতালে কাজ করে। সন্ধ্যে নামলে গেস্ট হাউস ফিরে যেতাম। গোটা জায়গাটাই মাওবাদী অধ্যুষিত; তাই রাতে বাইরে বেরোনোরও উপায় নেই। সিআরপিএফের গাড়ি টহল দেয় সন্ধ্যার পর। একাকী নিঃসঙ্গ জীবনযাপন। এভাবেই সপ্তাহ তিনেক কাটল।
আগস্ট মাসের শেষের দিক নাগাদ বঙ্গোপসাগরে এক গভীর নিম্নচাপ তৈরি হল। ঘূর্ণাবর্তটা ঘনীভূত হয়ে দক্ষিণ উড়িষ্যা উপকূলের দিকে সরে এল। সেই প্রথম খোলা মাঠের মধ্যে ওভাবে বর্ষা আসতে দেখলাম। দক্ষিণ পূর্বের উঁচু পাহাড় গুলোর দিক থেকে একটার পর একটা মেঘ ভেসে আসতে শুরু করল। আর এই মেঘ আমাদের কালবৈশাখীর দৈত্যাকার কিউমুলোনিম্বাস মেঘ নয়। এর যেন বিরাম নেই। স্তরে স্তরে আকাশে সাজানো আছে। একটার পর একটা ভেসে ভেসে আসছে অবিরাম বর্ষণধারায় সব কিছু ভাসিয়ে নিয়ে যাবে বলে। সাইটের সমস্ত কাজ বন্ধ করে দিতে হল শেষে।
বাইরের মিস্ত্রি ছিল জনা চারেক। তাদের জন্য সাইটের একধারে দর্মা আর বাঁশ দিয়ে একটা অস্থায়ী টালির ঘর বানানো হয়েছিল। এক ঝড়ের রাতে টালির চাল সহ পুব দিকের দেওয়ালটা প্রায় ভেঙ্গে গেল। পরের দিন সমস্ত মালপত্র নিয়ে তারা সাইটের বেসমেন্টে উঠল। তিনটে ক্যাম্প খাট জোগাড় করে কোনমতে মাথা গোঁজার ঠাইটুকু হল। বেসমেন্টে যাবার নেড়া সিঁড়িটার উপরে বেশ কিছুটা জায়গা জুড়ে ত্রিপল টানিয়ে সেখানে ষাট ওয়াটের একটা বাল্ব জ্বালানো হত সন্ধ্যের পর। খুব সামান্য জায়গাই আলোকিত হত তাতে। তবু ঐ আলোক বৃত্তের মধ্যেই মানুষগুলোর সন্ধ্যেটা কাটত। আঁধার নামলে, ঐ বিশাল জনহীন প্রান্তরের মধ্যে হলদে আলোয় অসমাপ্ত বিল্ডিংটাকে ছায়াময় ধ্বংসস্তূপের মত দেখায়।
একদিন শুনলাম মিস্ত্রিরা রাতে ভূত দেখেছে। বৃষ্টির মধ্যে রাত্রিবেলা কিছু একটা দাপাদাপি করে বেড়িয়েছে গোটা হোস্টেল বিল্ডিংয়ের ফ্লোরে। ঠিক হল পরের দিন তাদেরকে গেস্ট হাউসের স্টোররুমে সরিয়ে আনা হবে।
বাইরের চারজন মিস্ত্রির মধ্যে দুজন ছিল বাঙালি। প্রথম থেকেই তারা খুব আপত্তি করছিল সেই রাতটা থাকতে। বেগতিক দেখে আমাদের মিস্ত্রিদলের সর্দার কীচকদা আর সাইট ম্যানেজারও ঐ রাতটা সাইটে থাকতে রাজি হল। আমারও বহুদিনের শখ ছিল সাইটে রাত কাটাবার। এই সুযোগে সেটা পূর্ণ হল।
অন্যদিন কাজের শেষে ম্যানেজারের বাইকে গেস্ট হাউস ফিরতাম। সেদিন দুজনেই রয়ে গেলাম। ঝড়ের দাপটে টানা তিন চারদিন সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। ছটার পর থেকেই চাপ চাপ অন্ধকার গোটা হস্টেল বিল্ডিংটাকে ঘিরে ধরল। বাইরে টিপ টিপ করে এক ঘেয়ে বৃষ্টি পড়ছে। সামান্য একটা ষাট ওয়াটের বাল্বের সাথে অনন্ত অন্ধকারের অসম লড়াই। তবু যতক্ষণ ঐ ফিকে হলুদ আলোকবৃত্তের মধ্যে থাকা যায় ততক্ষণ মনে সাহস থাকে। বাইরের গাঢ় অন্ধকারের দিকে তাকালেই বুকটা ঢিপ ঢিপ করে।
রাত বাড়লে বাল্বের তলায় রান্না চাপিয়ে দেওয়া হল। ঝড়ের দাপটে আশে পাশের গ্রাম থেকে মাছ ডিম কিছু আসেনি। রাত্রিবেলার মেনু বলতে চালে ডালে মিশিয়ে খিচুড়ি আর টক আচার। স্টোভের পাশে বসে নারায়নদার সাথে গল্প করছিলাম। ওর বাড়ি কল্যাণীতে। আমাকে বাঙালি পেয়ে খুশি মনে বকে যাচ্ছিল। সেই এগারো বছর বয়সে ইট বওয়ার কাজ দিয়ে এই মিস্ত্রি জীবনে প্রবেশ। তারপর বিশ বছর দেখতে দেখতে কেটে গেছে। ষোলো বছর বয়স থেকে মিস্ত্রির কাজ শুরু করেছে। এখন রাজমিস্ত্রি। রেট দিনপ্রতি সাড়ে চারশো। বাঁশের কাজ, দেওয়াল গাঁথা, সিমেন্টের গাঁথনি,কলের ফিটিং- হেন কাজ নেই সে জানেনা। এরকম আরো কত কি বলে যাচ্ছিল নিজের মনে। সবটা শুনছিলামও না।
দূরে, পাহাড়গুলোর ওপাশে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছিল মাঝে মাঝে। খোলা মাঠের মধ্যে দাঁড়িয়ে কখনো আকাশ জুড়ে বিদ্যুতের ঝলকানি দেখেছেন? আকাশটা মুহূর্তের জন্য কি এক অপার্থিব গাঢ় বেগুনী রঙে ভরে ওঠে! ক্ষণিকের জন্য দূরের অরন্যে ঢাকা পাহাড়গুলো চোখের সামনে এসেই মিলিয়ে যাচ্ছিল ঘন অন্ধকারে।
আটটার পর হাওয়ার দাপট বাড়ায় আমরা বেসমেন্টে নেমে গেলাম। নীচে ইলেকট্রিসিটি নেই। সম্বল বলতে দুটো এলইডি লণ্ঠন আর একটা হেরিকেন। ঘরগুলোয় প্লাস্টার হয়নি। বেসমেন্টের ছাইরঙা নগ্ন পাথরের দেওয়ালে আমাদের ছায়াগুলোকে ক্ষতবিক্ষত দেখাচ্ছিল।
আরেকটা অদ্ভুত জিনিস লক্ষ্য করলাম। কথা বললেই প্রতিটা ঘরে খুব হালকা একটা প্রতিধ্বনি হচ্ছে ফিস ফিস করে। হাওয়ার তেজ বাড়লেও একটা মৃদু হিসহিসে শব্দে ঘরগুলো ভরে যাচ্ছে। আসলে বেসমেন্টের গম্বুজাকৃতি ছাদগুলো শুধু ইট দিয়ে এক বিশেষ উপায়ে তৈরি হয়েছিল। এই বিশেষ অবতল আকারটার জন্যই ফাঁকা ঘরগুলোয় মৃদু প্রতিধ্বনি হচ্ছে। ব্যাখাটা জানলেও একা অন্ধকারে দাঁড়িয়ে হাওয়ার ফিশফিশানি শুনতে অস্বস্তি হয়।
নটা নাগাদ খিচুড়ি খেয়ে আমাদের ম্যানেজার ভদ্রলোক শুয়ে পড়লেন। আমি, কীচকদা, নারায়নদা সহ তিন চারজন জেগে রইলাম। বাইরে তুমুল ঝড় বৃষ্টির মধ্যে ভেতরে লন্ঠনের হলদে আলোয় আমাদের ছায়াগুলো তির তির করে কাঁপছিল। জানলায় কাঁচ লাগানো হয়নি, তাই একপশলা ভিজে হাওয়ায় বৃষ্টির ছাঁট আসছে মাঝে মাঝেই। একটু বাদে, বাইরে থেকে কোঁক কোঁক করে একটা শব্দ শোনা যেতে লাগল দশ পনেরো সেকেন্ড অন্তর অন্তর।
কীচকদা বলল, ও কিছু না। সাপে ব্যাঙ ধরেছে। গিলতে পারছেনা, তাই কষ্ট পাচ্ছে! দেখ, সামনের ইটের গাদা থেকে শব্দটা আসছে।
সময় কাটাতে কিছুক্ষণ ২৯ খেললাম সবাই মিলে। তারপর গল্প শুরু হল। আমার চিরকালই আদিবাসীদের গ্রামীণ জীবন নিয়ে আগ্রহ আছে। সেই নিয়েই কথা হচ্ছিল।
কীচকদা ভাঙা ভাঙা হিন্দি আর ওড়িয়া মিশিয়ে বলল- ওদের গ্রাম তো অনেক ভালো। দুরের পাহাড় গুলোর ওপাশে, ঘন জঙ্গলের মধ্যে মধ্যে এমন কত জনবসতি রয়েছে যেখানে রাস্তা তো দূর, একটা মুদিখানার দোকান পর্যন্ত নেই। এই রাষ্ট্রযন্ত্র তাদের কিছুটা এড়িয়ে চলে। সেখানে লাল পার্টির সেনানীদের অবাধ আনাগোনা। সামনের উঁচু পাহাড়ের পিছনের ঢালে জঙ্গল এত গভীর যে সেখানে দিনের বেলাতেও বিশেষ আলো ঢোকেনা! তার মধ্যে দিয়ে সরু সরু পায়ে চলা পথ। ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের বাবুরা ভয়ে সেসব রাস্তা মাড়ায় না।
এসবের মাঝে নারায়নদা ওকে থামিয়ে জিজ্ঞেস করল, এই অন্ধকারে পথ চলতে ওর ভয় করেনা?
ও একগাল হেসে বলল, ভয় পেয়ে কি হবে?
আসলে ওদের জীবনে ভয় পাওয়াটা বিলাসিতা। দুরের পাহাড়ের নীচের যে গ্রামটায় কীচকদা থাকে সেখানে কারেন্ট এসেছে মাত্র তিন চার বছর আগে। ওদের বাড়িতে অবশ্য আলো নেই। ভরসা বলতে কুপি আর হেরিকেন।
ছোট থেকে অন্ধকারেই মানুষ। আলো থাকলে অন্ধকারের শক্তিও থাকবে। তাই ওরা অপদেবতা মানে। জঙ্গলের রাস্তায় চলার সময় ওরা পিছন ফিরে তাকায়না। ওরা একধরনের ডাইনের অস্তিত্বে বিশ্বাস করে। রাত্রিবেলা যাদের পায়ের পাতা উল্টো দিক করে পড়ে, যারা পথিকের নাম ধরে ডাকে। এরা একলা মানুষ পেলে তার গন্তব্য ভুলিয়ে অচেনা স্থানে নিয়ে আসে। তাই রাতের বেলা ওরা কিছু বিশেষ রাস্তা ধরেই যাতায়াত করে। আসলে দক্ষিণ উড়িষ্যার পাহাড় জঙ্গল ঘেরা এই প্রত্যন্ত অঞ্চলে এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রাম যেতে হলে ভরসা হল জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে সরু সরু মেঠো পথ। সম্বল বলতে থাকে দু ব্যাটারির টর্চ আর লাঠি। কোন কোন পাহাড়ে আবার দাঁতাল হাতির পাল ঘুরে বেড়ায়। তাছাড়া হিংস্র বন্য পশুর ভয় তো আছেই।
ঠিক ভুল রাস্তা তোমরা বোঝো কি করে? জিজ্ঞেস করলাম।
মানুষ বোঝেনা কিন্ত কুকুর বোঝে। কুকুরদের অনুভুতি প্রবল হয়। একটা কথা জেনে রাখ বাবু, যে অন্ধকার রাস্তায় কুকর যেতে ভয় পায় সেই রাস্তায় কখনো যেতে নেই।
হিন্দি-ওড়িয়া মিশিয়ে কীচকদা এত প্রত্যয়ের সাথে কথাটা বলল যে ঐ অন্ধকার ঘরে বসেই আমার গায়ে কাঁটা দিল। আমি ঈশ্বর বা ভূত, কোনটাই মানিনা। তবে কখনো ভয় পাইনি বললে, অত্যুক্তি করা হবে।
এগারোটার পরে আমরা মশারি খাটিয়ে শুয়ে পড়লাম। একঘেয়ে বৃষ্টির শব্দ আর মেঘের গুরু গুরু গর্জন শুনতে শুনতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি খেয়াল নেই। ঘুমটা ভাঙল সাড়ে তিনটে নাগাদ। বাইরে হাওয়ার তেজ কমে এসেছে। বৃষ্টির মিহি শব্দটা কানে আসছে শুধু। একবার ছোট কাজে যাওয়ার দরকার ছিল। গোটা ঘরে এক ফোঁটা আলো নেই। এলইডি লাইট গুলোও কোথায় রেখেছে কে জানে! উপরের ফ্লোরের বাল্বটা নিভে গেছে ঝড়ের দাপটে! সিঁড়ির জায়গাটা দিয়ে উপর থেকে সামান্য আলো এসে পরেছে করিডরটায়। অন্ধকার করিডরের ওপাশে অসম্পূর্ণ কিচেন আর টয়লেট ব্লক। ওদিক থেকে একটা পাতলা শিসের মত শব্দ ভেসে আসছে।
মোবাইলের টর্চটা জ্বেলে ঘরের দরজা অব্দি উঠে গেলাম। একদমকা ঠাণ্ডা হাওয়ায় গা’টা শিরশির করে উঠল। ঠিক ঐ মুহূর্তে একবার বিদ্যুৎ চমকাল। পলকের জন্য সেই আলোয় অন্ধকার করিডরটা যেন একটা মায়াবী নীলচে আলোয় জ্বলে উঠেই দপ করে যেন নিভে গেল। অন্ধকারটা আবার ফিরে এল। লম্বা করিডরটার দিকে তাকিয়ে ঐ অন্ধকারের মধ্যে একটা অদ্ভুত ভয় আমার মনের মধ্যে চেপে বসল।
বারো পনেরো ফুটের করিডোর। ওপাশে টর্চ মেরে দেখলাম বাথ্রুম আর কিচেন অংশটা জলে ভেসে গেছে। সম্ভবত মাটির নীচ থেকে জলটা উঠে আসছে। টর্চটা সরাতেই আবার ভয়টা দানা বাঁধছে। ঘুটঘুটে অন্ধকারে এই ভয়টা জন্মায় না। এই ভয়ের জন্ম হয় খুব ক্ষীণ আলোতে; যে আলোয় সবকিছু ঝাপসা দেখায়। অনুভব করলাম যে অন্ধকার জায়গাটার মধ্যে দিয়ে হেঁটে যাওয়ার মত মনের জোর পাচ্ছিনা। জানি কিচ্ছু নেই ওপাশে, জানি পুরোটাই মনের ভ্রম। তবু প্রবল অস্বস্তি হচ্ছে।
ভয় ব্যাপারটা আমাদের মনের অবচেতনেই ঘাপটি মেরে থাকে। আমাদের শৈশবের কোন বিশেষ ক্ষত অনেকসময় গভীর ভয়ের জন্ম দিয়ে যায় যেগুলো বড় হয়ে মানসিক চাপের মধ্যে আবার ফিরে আসে। হয়তো এরকম কোন কারণেই, সেদিন ঐ বৃষ্টিভেজা রাতে অন্ধকার করিডরটা পেরিয়ে যাওয়ার সাহস হয়নি আমার।
ঘড়িতে দেখলাম পৌনে চারটে বাজে। ধীরপায়ে বিছানায় ফিরে এসে ভোরের জন্য অপেক্ষা করতে থাকলাম। একটু বাদেই আলো ফুটবে। আলো ফোটার পর এই অনুভূতিগুলো খুব ছেলেমানুষি লাগবে। জানি।
ঘণ্টা দেড়েক বাদে দিনের আলো ফুটলে হাঁটতে বেরলাম। গোটা সাইট জুড়ে ভাঙ্গা পাথর, ইট আর বাঁশ গুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। সাবধানে পা ফেলতে হচ্ছিল। কাছেই একটা ছোট্ট নদী আছে যার জলের রঙটা ঘোলাটে; মাটির মত রঙ। সম্ভবত বর্ষার বৃষ্টিতে নতুন উদ্যমে ভূমিক্ষয় করতে শুরু করেছে। আনমনে হাঁটছিলাম নদীর ধার দিয়ে। হঠাৎ দেখলাম, দূরে ম্যানেজারবাবু হাত নেড়ে ডাকছেন। গেস্ট হাউসে ফিরতে হবে।
এই রাতের পর ঠিক দুদিন বাদে আমাদের গোটা সাইটটাই ছেড়ে দিতে হয়। প্রবল বৃষ্টিতে নীচে থেকে হুহু করে জল উঠে আসতে থাকে। বেসমেন্টে এক কোমর জল দাঁড়িয়ে যায়। আর দেখা যায় সেই জলে সাঁতার কেটে বেড়াচ্ছে অসংখ্য সাপ। বস ফোন করে বললেন, অনেক হয়েছে। এবার ফিরে এস বাপ। বাকি কাজ শীতে হবে।
সেই যে ফিরে গেলাম, আর ফেরা হলনা। ইন্টার্নশিপও শেষ হয়ে গেল দুমাস বাদে। মুনিগুদার সাথে সম্পর্কও চুকে গেল এজন্মের মত। তবে মানুষগুলো, কীচকদা, নারায়নদা, ম্যানেজারবাবু, সামনের উঁচু পাহাড়টা আর ঐ বিশেষ রাতটা আমাকে এখনো চুম্বকের মত টানে। হয়তো কোনদিন ফিরে যাব।
হয়তো আবার বছর কুড়ি পরে…
লিখেছেন অরুনাভ সান্যাল, কো- ফাউন্ডার ও এডিটর, স্থাপত্য।
ফিচার ইমেজ ও অন্যান্য লেখকের থেকে।
স্থাপত্য সাধারন মানুষের মধ্যে আর্কিটেকচার ও ডিজাইন নিয়ে সচেতনতা গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে বাংলা ভাষায় একমাত্র অনলাইন ম্যাগাজিন। আমাদের পাশে থেকে ও সমর্থন করে এই উদ্দেশ্য সফল করতে আমাদের সাহায্য করুন।
ওয়েবসাইট (Website) | ফেসবুক (Facebook) | ইন্সটাগ্রাম (Instagram) | লিঙ্কড-ইন (LinkedIn)
Get real time updates directly on you device, subscribe now.
Arunava graduated in Architecture from IIEST, Shibpur in May 2018. He recently acquired his Master's Degree in Rural Management (PGDRM) from the Institute of Rural Management, Anand (IRMA). He has an interest in Rural Sales, Marketing, and Consumer Behavior.
Arunava was a part of a National Team that won the ISB Invest-O-Pact by presenting a startup idea in the social impact space in ISB's Annual International Management Festival 2020. Arunava also won the Unknown Crafts Person Trophy, a national competition hosted by the National Association of Students of Architecture (NASA) in 2016. In the year 2018, Arunava co-founded Sthapatya (http://sthapatya.co/) which is India's first online magazine on Architecture in the Bengali Language.
Prev Post
Next Post
Recover your password.
A password will be e-mailed to you.