সাধারন মানুষের মধ্যে আর্কিটেকচার ও ডিজাইন নিয়ে সচেতনতা গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে বাংলা ভাষায় একমাত্র অনলাইন ম্যাগাজিন
his response xxx videos

ইতন্ডার ইতিকথা

Itonda , Birbhum- A village forgotten in time

2 1,987

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

Spread the love

আমার কাছে পুজো মানে– প্রথম এক দুদিন রাত জেগে কোলকাতার ঠাকুর দেখা। তারপর অষ্টমীর দিনটা এলেই কোলকাতার এই কোলাহল ছেড়ে পালিয়ে যাই  রাঙা মাটির দেশে– আমাদের দেশের বাড়ি। আমার পুজো মানে– পরিবারের সবাই মিলে সারাদিন জমিয়ে আড্ডা, হৈ-চৈ, গ্রামের সাবেকিয়ানা, ঠাকুরদালান আর বীরভূমের প্রাচীন ইতিহাসকে খুঁজে ফেরা।  প্রতি বছরেই পুজো শেষে আমরা সদলবলে বেরিয়ে পরি– কখনও মালুটি, কখনও গড়-জঙ্গল আবার কখনও ঝারখন্ড লাগোয়া কোনো দুর্গম উষ্ণ প্রস্রবনের খোঁজে। এবছর নেট ঘেঁটে ঠিক করলাম ইটন্ডা যাবো– বোলপুর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে বীরভূম জেলার সীমানায় এক প্রত্যন্ত গ্রাম। ইটন্ডা নামটা আসলে ব্রিটিশ ‘EAST INDIA’র অপভ্রংস। দেড়শো দুশো বছর আগে  অজয় যখন গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যেত তখন নীল চাষের আর ব্যবসার জন্য বিখ্যাত ছিল জায়গাটা। এখন অবশ্য সময়ের সরনি বেয়ে নদী সরে এসেছে আনেকটা, নীল চাষের প্রয়োজনও ফুরিয়েছে। উনবিংশ শতাব্দীর গোড়ায় বিভিন্ন পেশার মোট ১৮ টা পাড়া নিয়ে তৈরি এই বর্ধিষ্ণু গ্রাম– আজ কালের স্রোতে তার জৌলস হারিয়েছে।

itondar itikotha, itonda, terracotta, terracotta architecture, terracota temples, bengal architecture, temple architecture of bengal, temples of bengal, sthapatya, sthapatya.co, sthapatya publishers

দেড়-দু ঘণ্টা বাদে বাদে বোলপুর থেকে সিঙ্গির বাস ছাড়ে, সেই পথেই পরে গ্রামখানা। অজয়ের ওপাশেই আরেকখানা সিঙ্গি আছে। বর্ধমান জেলার বর্ধিষ্ণু গ্রাম। মধ্যযুগীও কবি কাশীরাম দাশের জন্মস্থান।

itondar itikotha, itonda, terracotta, terracotta architecture, terracota temples, bengal architecture, temple architecture of bengal, temples of bengal, sthapatya, sthapatya.co, sthapatya publishers

৮ টা নাগাদ বাস স্ট্যান্ডে এসে শুনলাম-”আজ সকালের বাস আর আসেনি ভাই! মাঝ রাস্তায় ইঞ্জিন বিগড়েছে। ”

পরের বাসে চেপে যখন গ্রামের সীমান্তে নামলাম তখন সূর্য মাথার উপর উঠে গেছে। ধানক্ষেতের মধ্যে দিয়ে পায়েচলা সরু রাস্তা নেমে গেছে পিচ রাস্তা থেকে। দু-চার পা এগোতেই পুকুরপাড়ে একটা প্রকাণ্ড পাকুড় গাছ চোখে পরল যার কাণ্ডটা বড় আদ্ভুত! ফাঁপা মনে হল দূর থেকে। একটু এগোতেই বুঝতে পারলাম কাণ্ডটা আসলে একটা শতাব্দী প্রাচীন মন্দির, কিন্তু গাছটা এমনভাবে পুরো স্থাপত্যটাকে গ্রাস করেছে যে কয়েকটা প্রাচীন ইটের অবশেষ ছাড়া আলাদা করে মন্দিরটাকে বোঝার কোনো উপায় নেই। আঙ্কোরভাটের ‘Ta Prohm‘কে মনে করিয়ে দিল।

itondar itikotha, itonda, terracotta, terracotta architecture, terracota temples, bengal architecture, temple architecture of bengal, temples of bengal, sthapatya, sthapatya.co, sthapatya publishers

বীরভূমের ল্যাটারাইট মাটি আবার খনিজের ভরপুর। জলটুকু পেলেই বট, আশ্বথ, পাকুড়ের মত গাছ মন্দির আঁকড়ে ধরে। মূল মন্দিরটা হয়তো চারচালা কিম্বা রেখা দেউল শৈলীর অনুকরণে নির্মিত হয়েছিল। কিন্তু এভাবে মূল গ্রামের বাইরে এক খানা মন্দির দেখে একটু অবাকই হলাম। সাধারনত এরকম ছোট মাপের মন্দির জোড়ায় বানানো হয়ে থাকে। পাথরের অভাবে হয়তো খুব উঁচু করা যায়না বলেই বাংলায় একসাথে অনেকগুলো মন্দির তৈরির প্রথা আছে।

itondar itikotha, itonda, terracotta, terracotta architecture, terracota temples, bengal architecture, temple architecture of bengal, temples of bengal, sthapatya, sthapatya.co, sthapatya publishers

স্থানীয় পুরোহিতের কাছ শুনলাম- পুরান কথিত সতীর কেশ এই মন্দিরে এসে পরায় এর নাম হয় কেশবাইচণ্ডীতলা। এখনও একাদশীর দিন মেলা বসে প্রতিবছর। গর্ভগৃহে উঁকি মারতেই সিঁদুর মাখানো কালো মূর্তির টুকরো চোখে পড়ল। আসলে বাংলার জলবায়ুর জন্যই হোক কিম্বা পাথরের অভাবেই হোক, পোড়া মাটির ইট দিয়ে বাংলায় যে মন্দিরগুলো বানানো হয়ে থাকে তা খুব উঁচু করা যায় না যেমন, তেমনই খুব বেশীদিন টেকেও না। টেরাকোটার প্রলেপ দিয়ে কিছুটা ক্ষয় রোধ হয় ঠিকই , কিন্তু তার আয়ুও বড়জোর ৩০০-৪০০ বছর। পুরোহিতমশাই বললেন- ষোড়শ শতকে কালাপাহাড়ের আক্রমণে মন্দিরের প্রাচীন অস্টধাতুর বিগ্রহটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরবর্তী কালে আবার অস্টাদশ শতকে বর্গী আক্রমনের সময়ে এই গ্রামের নদী– বন্দর প্রায় ধংস হয়ে যায়। গ্রামের বাকি মন্দিরগুলো সবই প্রায় ঊনবিংস শতাব্দীর শুরুতে বানানো। তবে দুঃখের ব্যাপারটা হল বছর কয়েক আগেই মন্দিরের বিগ্রহটা চুরি গেছে। সামনে যেটা চোখে পরছে সেটা মূল বিগ্রহটার আদলে বানানো নকল।

মনটা ভারি হয়ে রইল। গ্রামের সীমান্তে পাকুড় গাছের কোটরে গত ৩০০/৪০০ বছর ধরে অবহেলায়, আযত্নে পরেছিল অসাধারন  শিল্পকর্মটা। আজ হয়তো সেটা ইউরোপের কোনো বৈঠকখানায় কিম্বা কোনো ব্যক্তিগত সংগ্রহশালায় পাচার হয়ে গেছে। এই তো দিন দুই আগে কোলকাতায় যখন লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে থিমের ঠাকুর হল, সাধারন মানুষের ঢল নামল প্যান্ডেল গুলোতে। বহু জায়গাতে থিম হিসেবে তুলে ধরা হল প্রাচীন মন্দির শৈলী আর স্থাপত্য। মানুষ সারা রাত জেগে এই সব শিল্পকর্ম দেখলেন, প্রশংসা করলেন, অথচ পুজোর চারটে দিন বাদ দিয়ে বাকি দিনগুলোতে যদি বাংলার সাধারন মানুষের শিল্প, স্থাপত্য আর পুরাকীর্তিগুলোর প্রতি সামান্যও আগ্রহ থাকত, তাহলে হয়তো আমাদের অতীতটা এভাবে ধূসর হয়ে যেত না।

গ্রাম সড়ক যোজনার পাকা রাস্তা দুপা হাটতেই ফুরিয়ে গেল। কাঁচা রাস্তা ধরে চলতে চলতে মোবাইলের নেট অন করতেই অবাক হলাম। দিব্বি নেট খুলছে! কিন্তু আশ্চর্য! ৫১ পীঠের মধ্যে কোথাও ইটন্ডার উল্লেখ পেলামনা। গ্রামীণ জনশ্রুতি লোকমুখে অনেকটাই বদলে যায়, শেষে তার থেকে প্রকৃত ইতিহাস খুঁজে বের করাটাই কষ্টসাধ্য হয়ে ওঠে অনেকসময়। যে গ্রামের নামটাই এসেছে অস্টাদশ শতকের ব্রিটিশ কম্পানি থেকে, সেখানে ষোড়শ শতকে কালাপাহারের সময়ে কতদূর বসতি ছিল সে নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে (পরে ১৭৭৬ এ জেমস রেনেল সাহেবের বানানো ম্যাপে অজয়ের তীরে ইটিন্দা বলে একখানা ঘাঁটির উল্লেখ পাই)। তবে কালাপাহাড়ের আক্রমন যদি সত্যিই হয়ে থাকে তবে সবার প্রথমে মন্দিরের পার্শ্ববর্তী পুকুরটায় জাল ফেলা দরকার।  আশ্চর্যের ব্যাপারটা হল, তুর্কি আক্রমনের জন্যই হোক কিম্বা কালাপাহাড়ের রোষেই হোক, বাংলায় ত্রয়োদশ থেকে ষোড়শ শতাব্দী, এই তিনশো বছরের মধ্যে বানানো মন্দির প্রায় একটাও আর অবশিষ্ট নেই! সিন্ধু সভ্যতা আর বৈদিক সভ্যতার মধ্যে যেমন কয়েকশো বছরের আশ্চর্য নীরবতা, বাংলার ইতিহাসেও দ্বাদশ শতাব্দীর দেউল স্থাপত্য থেকে ষোড়শ শতাব্দীর চালা স্থাপত্যে বিবর্তনের যোগসূত্রটা অন্ধকারেই রয়ে গেছে।  এই সব সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতেই গ্রামের পথে হাঁটছিলাম। ডান দিকে একটা মোড় ঘুরতেই দ্বিতীয় মন্দিরটা চোখে এল।

itondar itikotha, itonda, terracotta, terracotta architecture, terracota temples, bengal architecture, temple architecture of bengal, temples of bengal, sthapatya, sthapatya.co, sthapatya publishers

itondar itikotha, itonda, terracotta, terracotta architecture, terracota temples, bengal architecture, temple architecture of bengal, temples of bengal, sthapatya, sthapatya.co, sthapatya publishers

পায়ে চলা সুঁড়ি পথ আর পুকুরের বাঁ পাশেই জোড় বাংলা মন্দির, তবে বিষ্ণুপুরের মত মধ্যেখানে চূড়া নেই। মন্দিরগাত্রে অসাধারন পোড়ামাটির কাজ তো ছেড়েই দিলাম, স্থাপত্যের বিচারে বা ইংরাজিতে আমরা যেটাকে ‘proportion’ বলি, তার বিচারেও মন্দিরটা অসাধারন। অমিতাভ গুপ্তের ব্লগে পড়েছিলাম– বছর দশেক আগে  রাজ্য পুরাতত্ব বিভাগ আর INTACH এর যৌথ প্রচেষ্টায় মন্দিরটাকে ধংসের হাত থেকে বাঁচানো গেছে। ব্লগে মন্দিরটাকে হাড়কাটা কালীর মন্দির বলা থাকলেও স্থানীয় উচ্চারণে সেটা ‘হড়কা’ কালী মন্দির হয়ে গেছে। এর ইতিহাসটাও ভীষণ রোমাঞ্চকর। ব্লগের লেখা আর গল্পকথা মিশিয়ে যেটা বুঝলাম– প্রায় দুশো-আড়াইশো বছর আগে, গ্রামের এই দিকটায় দুর্ধর্ষ হাড়কাটা ডাকাতদলের আস্তানা ছিল, যারা  রীতিমত শব সাধনা করত। সম্ভবত তারাই মন্দিরটা নির্মাণ করে ১৮৪৪ সালে। পরবর্তী কালে জালাল খান নামে এক পাঠান সেনাপতি ডাকাত দলকে দমন করলে মন্দিরের মালিকানা আসে সিউরির এক ধনী পরিবারের হাতে।  মাঝে কিছু পর্তুগিজও মন্দিরের সংস্কার করেছিল বলে জনশ্রুতি আছে। এরপর এক আদ্ভুত ঘটনা ঘটে।  ব্রিটিশ আমলে মন্দির সংলগ্ন স্থান থেকে সন্ধ্যের পর এক কিশোরী নিখোঁজ হয়। সারা রাত খোঁজা খুঁজি করেও কিশোরীর সন্ধান মেলেনা । পরের দিন সকালে কিশোরীর রক্ত মাখা শাড়ির টুকরো মন্দিরের গর্ভগৃহে বিগ্রহের মুখে পাওয়া যায়। সেই থেকে বহুদিন, মন্দির সংলগ্ন জায়গাটা গ্রামবাসীরা এড়িয়েই চলতো। সময়ের সাথে বট– অশ্বত্থ গাছের গুঁড়ি ইটের দেওয়াল ফাটিয়ে মন্দিরটাকে আরও জরাজীর্ণ করে তোলে। এখন অবশ্য INTACH এর সহযোগিতায় শুধু মন্দির সংস্কারই হয়নি– নতুন বিগ্রহ স্থাপন করে পুজোও চলছে পুরোদমে।

itondar itikotha, itonda, terracotta, terracotta architecture, terracota temples, bengal architecture, temple architecture of bengal, temples of bengal, sthapatya, sthapatya.co, sthapatya publishers

যতদূর জানি, বাংলায় নবজাগরণ আগে অস্টাদশ শতক পর্যন্ত গ্রামে গঞ্জে, শাক্ত কাপালিক, ডাকাত আর ঠগিদের মধ্যে তন্ত্র সাধনা আর বলিদান ব্যাপারটার চর্চা ছিল। আর তন্ত্র সাধনা বা শব সাধনার জন্য বেশ নিরিবিলি জায়গা প্রয়োজন। তাই কুসংস্কারাছন্ন গরিব গ্রামবাসীদের নরমাংস লোলুপ কালীর ভয় দেখিয়ে সেখানে নির্বিঘ্নে সাধনা চলতো। নারায়ন সান্যালের লেখা রুপমঞ্জারী উপন্যাসেও এরকম ঘটনার উল্লেখ পেয়েছি। ডাকাতরা সাধারনত কালীর ভয়ংকর দুটো রুপ- গুহ্যকালী বা শ্মশানকালীর সাধনা করত। ডাকাতি করতে যাবার আগে নরবলি দিয়ে কালীর পূজো হত। এখনকার নতুন বিগ্রহটা অবশ্য প্রচলিত দক্ষিণাকালীর রুপ। এই প্রসঙ্গে আমার একটা বিষয় মাঝে মাঝেই মনে হয়– সেটা হল স্থাপত্যের বিভিন্নতা বা স্থানভেদ অনুসারে বাংলার মন্দির স্থাপত্যকে চালা, রত্ন, দালান, মঞ্চ, চাঁদনি, দেউল ইত্যাদি বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। কিন্তু এই শ্রেণিবিভাগের সাথে কি পূজিত দেবতার কোনো সম্পর্ক আছে? মানে কালী, বিষ্ণু বা শিব– দেবতার প্রকৃতি অনুসারে মন্দির স্থাপত্য কতটা ভিন্ন হত! এই বিষয়টা নিয়ে কোথাও গবেষণা দেখিনি!

এক স্থানীয় গ্রামবাসীর সাথে কথায় কথায় জানতে পারলাম– সংস্কারের সময় যখন মন্দিরের দেওয়াল ফাটিয়ে গাছের শেকড় উপড়ানোর কাজ চলছিল তখন দেওয়ালের মধ্যে লুকোনো একটা মাটির হাড়ি পাওয়া যায়। মুখের সিলটা ভাঙা ছিল। যদি কিছু থেকে থাকে তবে আগেই সেসব লোপাট হয়ে গেছে। এছাড়াও মন্দির সংস্কারের সময় মন্দিরের মধ্যে যে গোপন সুরঙ্গ পাওয়া যায়, রাজ্য পুরাতত্ব বিভাগ সেটাকে বছর দশেক আগেই বুজিয়ে দেয়। অন্ধকার সিঁড়ির ধাপ দিয়ে মাটির নীচে নামার সাহস হয়নি কারোর। আমার বিশ্বাস সুরঙ্গটা অজয় অব্দি গিয়েছিল। সে সময় নদীখাত মন্দিরের অনেক কাছে ছিল। তবে শেষ পঞ্চাশ বছরে গ্রামে বারকয়েক বন্যা হয়েছে। তাই সুরঙ্গপথ এতদিনে নিশ্চয়ই বুজে গেছে। এরকম সুরঙ্গ হুগলীর হংসেশ্বরী মন্দিরেও ছিল বলে শুনেছি। আগেকার দিনে জমিদার বা ভূস্বামীরা বাড়ির কাছে মন্দির তৈরি করলে, মাটির নীচে মন্দিরের গর্ভগৃহ পর্যন্ত সুরঙ্গপথ তৈরি করাতেন। তবে সুরঙ্গ বা ডাকাতদের তন্ত্র সাধনার কথা তো আগেও শুনেছি, কিন্তু এই মন্দিরকে যে পর্তুগিজরা সংস্কার করে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচায়– এই বিষয়টাই আমাকে সবথেকে টানছিল। মন্দিরের ভেতর থামের গায়ে গ্রীক ‘Ionic Column‘, মন্দিরগাত্রে পোড়ামাটির ফলকে অসংখ্য ইউরোপিয়ান সেনা– এসবই প্রমান করে যে গ্রামে বিদেশীদের আনাগোনা ছিল। একটা টেরাকোটা ফলকে তো দুটো বোম্বেটে জাহাজকে রীতিমত যুদ্ধরত অবস্থায় দেখলাম। কালী মন্দিরের সাথে, পর্তুগিজদের সম্পর্ক অবশ্য এর আগেও শোনা গেছে। অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি কোলকাতায় এক কালী মন্দিরে প্রায়শই যেতেন। এখন সেটাকে আমরা ফিরিঙ্গি কালীবাড়ি বলে জানি (যদিও এই যোগসূত্রটা নিয়ে বিতর্ক আছে। ইতিহাসের পাতায় পড়েছিলাম, পর্তুগিজরাই বাংলায় প্রথম উপনিবেশ স্থাপন করে ১৫২৮ নাগাদ চট্টগ্রামে। হুগলীতেও ব্যবসা বানিজ্য চালাত। কিন্তু ১৬২৮ নাগাদ, পর্তুগিজ পাদ্রিরা বাংলায় ধর্মান্তকরন শুরু করলে সম্রাট শাহজাহানের নির্দেশে বাংলার শাসক কাশিম খান পর্তুগিজদের নিধন শুরু করেন। প্রায় হাজার দশেক পর্তুগিজ সম্রাটের রোষের বলি হয়। এর পরেও সপ্তগ্রাম, ব্যান্ডেল, ঢাকায় পর্তুগিজ প্রভাব ছিল। ১৬৬৬ নাগাদ চট্টগ্রামের যুদ্ধে শায়েস্তা খান পর্তুগিজদের আবার পরাজিত করে তাদের কফিনে শেষ পেরেকটা পুতে দেয়। বাংলা বিজয়ের স্বপ্ন সেখানেই শেষ হয় তাদের। অবশ্য এরপরও যে কিছু পর্তুগিজ বাংলার মায়া কাটিয়ে যেতে পারেনি , তার উদাহরন তো এই গ্রামটাই।

itondar itikotha, itonda, terracotta, terracotta architecture, terracota temples, bengal architecture, temple architecture of bengal, temples of bengal, sthapatya, sthapatya.co, sthapatya publishers

কাঁচা রাস্তা ধরে সামান্য এগোতেই মূল গ্রামটা শুরু হল। কয়েকটা ছোট্ট ছেলে ডাংগুলি খেলছিল রাস্তার ধারে। ওদের বাকি মন্দির গুলো কোথায় জিজ্ঞেস করতেই উঠে সামনের দিকে আঙুল তুলে দেখালো।

itondar itikotha, itonda, terracotta, terracotta architecture, terracota temples, bengal architecture, temple architecture of bengal, temples of bengal, sthapatya, sthapatya.co, sthapatya publishers

নদীটা কোথায় রে?  জিজ্ঞেস করলাম। পাশের ধানক্ষেতটার দিকে  দেখিয়ে বললো মাঠ ধরে মিনিট পনেরো যেতে হবে। ওর বন্ধুর বাড়ির দুতলার ছাদ থেকে নাকি নদী দেখা যায়। এক দেড় কিলোমিটার হবে বড়জোর। নদীর ওপার থেকেই বর্ধমান শুরু।

itondar itikotha, itonda, terracotta, terracotta architecture, terracota temples, bengal architecture, temple architecture of bengal, temples of bengal, sthapatya, sthapatya.co, sthapatya publishers

একটু এগোতেই দুটো বাড়ির মধ্যে দিয়ে একটা সরু গলি; গলির শেষেই তৃতীয় মন্দিরটা। অবশ্য সামনের রাস্তা থেকেই মন্দিরটা দেখা যায়। বেশ উঁচু মন্দির। লোকজন না জানলে অবশ্য, মন্দির না বলে পুরনো বাড়ি বলেই ভুল করবে। দুতলা ‘Flat Roof Structure’,বাংলার একতলা চাঁদনি মন্দিরগুলোর সাথে কিছুটা মিল থাকলেও এই স্থাপত্য রীতি বাংলায় বিরল। কিন্তু সামনের থাম গুলো দেখে অনভিজ্ঞ চোখেও ইউরোপিয়ান প্রভাব ধরা পরবে। আগেকার দিনে জমিদার বাড়িগুলো যে ‘Palladian Mansion’এর অনুকরনে বানানো হত, এই মন্দিরের সামনেও সেরকম থামের সারি। ‘Ionic Column’ গুলোর উপরের গোল আংশটা ভেঙ্গে গিয়ে এখন বৃত্তাকার লোহার শিক গুলো বেরিয়ে এসেছে। রোদ, ঝড়, বৃষ্টিতে জায়গায় জায়গায় চুন সুরকি খসে পরছে। গোল গোল ইট গুলোর মাঝে আগাছা বাসা বেঁধেছে। সবুজ শ্যাওলা মাখা মন্দিরের দালানটা অত্যন্ত পিছল। পা রাখতেই ঠাণ্ডা ভিজে স্যাত স্যাতে একটা আনুভুতি হল। মন্দিরের ভেতরের দেওয়ালে কয়েকটা টেরাকোটার ফলক বসানো আছে। ঠিক তার উপরেই রঙিন ‘stucco’র কাজ। নীচে শিকল আটকানো দুটো বন্ধ ঘর। পাশ দিয়ে সিঁড়ি উঠে গেছে। অবস্থা দেখে বুঝলাম যে বহু বছর তাতে মানুষের পা পরেনি।

itondar itikotha, itonda, terracotta, terracotta architecture, terracota temples, bengal architecture, temple architecture of bengal, temples of bengal, sthapatya, sthapatya.co, sthapatya publishers

সময় সুযোগ পেলেই বাংলার গ্রামে গ্রামে ঘুরে মন্দির দেখা আমার নেশা। বহু জায়গায় গিয়েছি। কিন্তু বীরভূমের এক প্রতন্ত গ্রামে যে এত সুন্দর ভাবে বাংলার মন্দির স্থাপত্য আর ইউরোপিয়ান রীতি মিলে মিশে থাকতে পারে- সে ধারনা আমার ছিলনা। নেশাগ্রস্থের মত ক্যামেরার শাটার টিপছিলাম। এমনসময় কানে এল– ”এই ছেলে। নেমে এস এখুনি। জুতো পায়ে কেউ মন্দিরে ওঠে?” পাশেই মাটির বাড়ির দরজা ধরে এক মাঝবয়সী মহিলা দাঁড়িয়ে আছেন। সুরসুর করে নেমে এলাম কথা না বাড়িয়ে। এরপর কথায় কথায় বেরিয়ে পরল আমাদের দেশের বাড়ি পুরন্দরপুর।  শুনেই ভদ্রমহিলা চোখ বড় বড় করে বল্লেন– ”ও বাবা। আপনারা কুটুম যে! আমার স্বামীও ওখানেই মানুষ। ঘরে আসুন দেখি। দুপুরের খাবারটাও খেয়ে যাবেন। ”

কি আদ্ভুত ব্যাপার। মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই গৃহস্বামী হন্ত দন্ত হয়ে চলে এলেন বাইকে করে। আমাদের গ্রামের নাম শুনেই সে কি খাতির! অনেক কাকুতি মিনতির পর শেষে রফা হল দুপুরের খাবার না খেলেও বিজয়ার মিষ্টিটুকু খেতেই হবে। তিনখানা স্টিলের প্লেটে অন্তত তিরিশ খানা নাড়ু এল বিভিন্ন ধরনের। সে কি ভয়ানক জোর জবরদস্তি! সম্পূর্ণ অচেনা আজানা তিনটে মানুষকে এভাবে যে কেউ আপন করে নিতে পারে, এ আমরা শহরের লোকেরা কল্পনাও করতে পারবোনা।  ঠুসে ঠুসে মিষ্টি খাইয়ে তবে তাদের শান্তি।

”সাধু’ আমরা। এ মন্দির তো আমাদের পূর্বপুরুষদেরই তৈরি ভাই। আগে নীল চাষের জন্য এগ্রামের নাম ছিল। এখন অবশ্য নীলকুঠি টা ভেঙ্গে সরকার ‘Flood Shelter’ বানিয়ে দিয়েছে।  রাস্তার ধারে, মাঠের আলে এখনও দু চারটে নীল গাছ হয়।  যাইহোক আগে এখানেই দালান বাড়ি ছিল আমাদের। ব্যবসা করে টাকা করেছিল পূর্বপুরুষরা।” সত্যিই তো, ঘরের ভেতর মাটির দেওয়ালের মধ্যে থেকে দেখলাম বহু প্রাচীন চুন সুরকির দেওয়ালের একটা অংশ বেরিয়ে এসেছে। ‘এখন আমাদের আর সে অবস্থা নেই ভাই। মাটির বাড়িতে থাকি। কোলকাতা থেকে মাঝে সাঝে লোকজন আসে। মন্দিরটা সারাবে বলে চলে যায়। আর কেউ ফেরেনা। আমাদের সে অবস্থাও নেই যা সারাবো। হয়তো সামনের বর্ষাতেই সামনের দিকটা পরে যাবে।”

itondar itikotha, itonda, terracotta, terracotta architecture, terracota temples, bengal architecture, temple architecture of bengal, temples of bengal, sthapatya, sthapatya.co, sthapatya publishers

যথাসাধ্য চেষ্টা করব। আশ্বাস দিয়ে বেরিয়ে এলাম। ‘কেউ ফেরেনা’ শব্দটা কানে বাজছিল। কিভাবে ওদের বলবো যে, কেউ ফিরবেওনা কাকা। প্রতিদিন এই বাংলায় কত প্রাচীন মন্দিরের ছাদ ধসে পরে, কত টেরাকোটার ভাস্কর্য সিমেন্টের প্রলেপের নীচে মুছে যায়, কেউ পরোয়াও করেনা।  ভাঙ্গা চোরা কয়েকটা মন্দির ভেঙ্গে  কোথায় ফ্ল্যাট উঠে গেল, কোথায় কয়েকটা পোড়ামাটির পুতুল নষ্ট হয়ে গেল তা নিয়ে সময় নষ্ট করার মত সময় বাঙালির সত্যিই নেই। এই নিয়ে আমাদের মত দু চারটে পাগল ছাড়া কেউ মাথা ঘামায় না।

গ্রামের বাকি তিনটে মন্দিরও পাশেই। একটা পঞ্চরত্ন, একটা রেখা দেউলের ছোট সংস্করণ। আর মাঝেরটা খুব আদ্ভুত। ছোট্ট আয়তকার মন্দিরটা, সমতল ছাদ। একধারে একটা ছোট্ট দরজা। ভেতরে প্রাচীন শিব লিঙ্গ। পঞ্চরত্ন মন্দিরটার গায়ে কালো পাথরের উপর বাংলায় কিছু খোদাই করা ছিল। ভাই পড়ার চেষ্টা করছিল। আমি বিজ্ঞের মত বললাম– ”ও পড়তে পারবিনা। প্রাচীন বাংলা। চর্যাপদের মত ভাষা।” কি আশ্চর্য। একটু মনযোগ দিতেই দেখলাম দিব্বি পড়া যায়।

itondar itikotha, itonda, terracotta, terracotta architecture, terracota temples, bengal architecture, temple architecture of bengal, temples of bengal, sthapatya, sthapatya.co, sthapatya publishers

”শ্রী শ্রী সিব মন্দীর। শকাব্দ ১৭৫০ সত্তে। রসত্ত পঞ্ছাসসন। ১২৩৫ সান প্রীরা। সানন্দ সাধুখাঃ ”

‘রসত্ত পঞ্ছাসসন’ টা সম্ভবত দিন বা তিথি জাতীয় কিছু হবে। ১৭৫০ শকাব্দ মানে ইংরাজিতে ১৮২৮ সাল।  মন্দির প্রতিষ্ঠাতা হলেন– সানন্দ সাধুখাঃ। তবে সে সময়ের ‘সাধুখাঃ’ উপাধি যে কি করে আজ ‘সাধু’ হয়ে গেল কে জানে!

টেরাকোটার ছবি গুলো মন দিয়ে ক্যামেরাবন্দী করছিলাম। বাবা মনে করিয়ে দিল এবার ফিরতে হবে। ১২.৫০ এর বাসটা মিস করলে পরেরটা আবার সেই ৩ টে নাগাদ। আর এই গণ্ডগ্রাম থেকে অটো, টোটো, কিছু পাওয়াও যাবেনা।  ক্যামেরা বন্ধ করে ফেরার রাস্তা ধরলাম। ছোট্ট গ্রাম। দু পা হাটতেই বাড়ি ঘর কমে এল। গ্রামের সীমান্তে সাদা রঙের একটা দুতলা পাকা বাড়ি। বাইরে থেকে খুবই সাধারন। সামনেই গ্রিল দেওয়া বারান্দা, সিমেন্টের পাকা দেওয়াল। কিন্তু ভেতরের দেওয়ালটার দিকে তাকাতেই চোখটা আটকে গেল। অন্তত দু ফুট চওড়া দেওয়ালটা। উপরের প্লাস্টার দু এক জায়গায় খসে, ভেতরের ইটগুলো বেরিয়ে পরেছে। আগেকার দিনের ছোট ছোট ইট। দুশো বছরের পুরনো হলেও আশ্চর্য হবনা। খুব ইচ্ছে করছিল ভেতরের লোকদের সাথে আলাপ করি।

itondar itikotha, itonda, terracotta, terracotta architecture, terracota temples, bengal architecture, temple architecture of bengal, temples of bengal, sthapatya, sthapatya.co, sthapatya publishers

আবার সেই একই পথ ধরে হাটতে হাটতে জোড়বাংলা মন্দিরটাকে পেরিয়ে, শতাব্দী প্রাচীন পাকুড় গাছটাকে পাশ কাটিয়ে যখন পিচ রাস্তায় পৌছালাম, দেখলাম রাস্তার ধারে চার পাঁচজন রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে বাসটা ধরবে বলে। আনেকদিন বাদে টিনের স্যুটকেস দেখলাম একটা ছেলের হাতে। পাশেই একটা মেয়ে কোলে শিশু নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বাচ্চাটার রোদ লাগছিল,তাই মেয়েটি হাতে আঁচল নিয়ে ঢেকে রেখেছে মুখখানা। সম্ভবত স্বামী স্ত্রীই হবে। ছেলেটার বয়স বড়জোর কুড়ি বাইশ। গায়ে সিল্কের সবুজ জামা,পায়ে একটা টকটকে লাল জুতো। বেশ উগ্র সাজপোশাক। ওদের দিকে তাকিয়েই দিব্বি সময় কাটছিল, এমন সময় দূর থেকে হর্ন বাজাতে বাজাতে বাসটা এল। ফাকা বাস। জানলার ধারেই বসার জায়গা পেলাম। দু ধারে দিগন্ত বিসারী সবুজ ধানক্ষেত। হু হু করে ঠাণ্ডা হাওয়া এসে চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে গেল। একটু বাদেই একটা ছোট খাল পেরোলো বাসটা। পাশের লোকটা বল্লো এটাই আগে আজয়ের মূল ধারা ছিল। এখন কোলকাতার আদিগঙ্গার মত অবস্থা। ছোবড়ার গদিতে শরীরটা এলিয়ে দিয়ে চোখ বুজলাম। আর হয়তো কোনদিনও এই পথে আসবোনা। সবার অলক্ষ্যেই রোদে, ঝড়ে, বৃষ্টিতে মন্দিরগুলো নষ্ট হয়ে যাবে একটু একটু করে। ব্যক্তিগত ভাবে আমি ঈশ্বরে বিশ্বাস করিনা, কিন্তু মানুষকে করি। প্রতিটা মন্দির, প্রতিটা টেরাকোটা ফলক আমাদের এই সভ্যতার, এই বাংলাদেশের সংস্কৃতির, আমাদের ইতিহাসের, আমাদের সমাজচিত্রের জীবন্ত দলিল। এগুলোকে যখন নষ্ট হতে দেখি তখন মনে হয় শুধু কিছু পোড়ামাটির ভাস্কর্যই নষ্ট হলনা, হারিয়ে গেল আমাদের গর্ব, আমাদের বাঙ্গালিয়ানা, স্বকীয়তা, আর ইতিহাস।

itondar itikotha, itonda, terracotta, terracotta architecture, terracota temples, bengal architecture, temple architecture of bengal, temples of bengal, sthapatya, sthapatya.co, sthapatya publishers

বোলপুর আসার আগেই ভাইয়ের ধাক্কায় ঘুম ভাঙল। ”দাদা, আমাদের কি কিছুই করার নেই।” আমি ঘুম চোখে মাথা নাড়লাম। ”ASI কে জানালে কিছু হবেনা? নিলয় জেঠুতো আছেন।” আমি হেসে আবার চোখ বুঝলাম। মনে মনে ভাবছিলাম,  কিছু করার ক্ষমতা হয়তো নেই। কিন্তু আর কিছু নাই পারি, অন্তত লিখে আর দশটা মানুষকে জানাতে তো পারি। সেটাই বা কম কি।  সেই চেষ্টাই করবো নিজের মত করে।

লিখেছেন অরুনাভ সান্যাল, কো- ফাউন্ডার ও এডিটর, স্থাপত্য

ফিচার ইমেজ ও অন্যান্য লেখকের থেকে।


স্থাপত্য সাধারন মানুষের মধ্যে আর্কিটেকচার ও ডিজাইন নিয়ে সচেতনতা গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে বাংলা ভাষায় একমাত্র অনলাইন ম্যাগাজিন। আমাদের পাশে থেকে ও সমর্থন করে এই উদ্দেশ্য সফল করতে আমাদের সাহায্য করুন।
ওয়েবসাইট (Website) | ফেসবুক  (Facebook) | ইন্সটাগ্রাম (Instagram) | লিঙ্কড-ইন (LinkedIn)

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

  1. SANJIBAN ROY says

    It’s true we are oblivion to our own roots embedded into our heritage and culture. But then there is someone like you somewhere who like us have an inner belief that nothing is totally lost. A cohesive effort from people from diverse fields and patronage of the private institutions can restore this rich architecture of Bengal.

  2. Soumen Dutta says

    কী সুন্দর লেখা। আপনারা একটা ভাল কাজ করছেন। অন্তত স্থানীয় ইতিহাস, স্থাপত‍্যর কথা মানুষ জানতে পারছেন। আপনাদের যাত্রা শুভ হোক।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

kirmiziyilan.com
error: Please get in touch at info.sthapatya@gmail.com