স্থাপত্য পাবলিশার্স
বর্ধমান । কোন্নগর । কোলকাতা
Sthapatya Publishers
Burdwan | Konnagar | Kolkata
info.sthapatya@gmail.com
Shubhayan M: +918653792921
Arunava S: +9194323 43169
স্থাপত্য পাবলিশার্স
বর্ধমান । কোন্নগর । কোলকাতা
Sthapatya Publishers
Burdwan | Konnagar | Kolkata
info.sthapatya@gmail.com
Shubhayan M: +918653792921
Arunava S: +9194323 43169
Trending
Get real time updates directly on you device, subscribe now.
নমস্কার।
ছোটবেলায় যখন আমরা শাঁখারীপুকুর হাউসিং এর আর-৬০ ফ্লাটে থাকতাম, তখন পূজোয় ভারী মজা হতো। সে প্রায় আজ থেকে বারো চোদ্দ বছর আগের কথা। হাউসিং এর মাঠের পুজোয় তখন এত জাঁকজমক ছিল না। প্যান্ডেল বড় হলেও সাদামাটা হতো। আর-৬০ ছিল হাউসিং এর অন্যতম ফ্ল্যাটগুলির মধ্যে একটি। বারান্দা থেকেই উৎসব ময়দান ইত্যাদি দেখা যেত। ছাদে উঠলে তো কথাই নেই। যেদিকে তাকাও, সেদিকে ভিউ। এক কথায় অনবদ্য।
২০০৬ সালে ঠাম্মার রিটায়ারমেন্টের পরে আমাদের ওই ফ্ল্যাট ছেড়ে দিতে হয়। পুলিশ লাইনের কাছে রাখালপিরতলার উল্টো দিকে অবস্থিত সুকান্তনগরের একটি বাড়িতে চলে আসি। শান্তশিষ্ট এক পাড়া। চাকুরীজীবী ভদ্রলোকেদের বাস। পূজোর দিনগুলোতে মনেই হতো না পূজো। নিস্তব্ধ সারাদিনের মাঝেই তখন থেকে বারো ক্লাস অব্দি এই বাড়িতেই বড় হয়েছি।
যাকগে। আমার রসহীন জীবনকাহিনি শোনাবো বলে আজকে লিখছি না। আজ কারণ অন্য।
২০১২ সালে যখন আমি বর্ধমান ছেড়ে বি.ই. কলেজে আর্কিটেকচার পড়তে যাই, তখন থেকে এখন অব্দি শান্তশিষ্ট এই শহরে অনেক পরিবর্তন এসেছে। সেই পরিবর্তন নিয়ে আজকে আপনাদের কিছু বলতে চাই। যেটুকু লিখছি, একটু ভেবে দেখবেন।
তখন থার্ড ইয়ারে পরি যতদূর মনে পরে। শুনলাম তিনকোনিয়া বাসস্ট্যান্ড নাকি সরে যাচ্ছে। আরে মশাই বলে কি? শহরের বুকে এতদিন ধরে একটা বাসস্ট্যান্ড রয়েছে। ঠিক পাশেই বর্ধমান রেলওয়ে ষ্টেশন। আর এরা বলে কিনা তুলে দেবে? দিয়ে কি হবে? হবে গিয়ে দুটো বাসস্ট্যান্ড, একটা আলিশা তে, আরেকটা নবাবহাট। চমৎকার। ছোট একটি শহরের জন্য দু দুটো বাসস্ট্যান্ড। মামদোবাজি হচ্ছে? বি.ই. কলেজের সদ্য সিনিয়র হওয়া ছেলে, তাতে আবার বাঙালি। প্রতিবাদী ভাবমূর্তির আবির্ভাব হতে বেশী কিছু করতে হয়না। সে যাইহোক, প্রতীবাদ বাড়ির ভেতরেই শেষ। কারণ? সেই ধমক দিয়ে বাবা বলে উঠলেন, “পড়াশুনা করছ, তাই করো। এখানে কে কি করছে তোমাকে দেখতে হবে না। সমাজসেবা তোমার কাজ না।” বেশ। অগত্যা কাজে মন দিলাম। বাসস্ট্যান্ডের জমি নাকি কোন একটি কোম্পানী কিনে নিয়েছে, বা ওরকমই কিছু শুনেছিলাম। সে জমি এখনও বেকার পরে। কাজে লাগেনি একটুও। বলা ভালো, লাগানো হয়নি। ১৯৪৭ এর দেশভাগের মতন তিনকোনিয়া বাসস্ট্যান্ডের পার্টিশন হয়ে গেল। দেশ বা বাসস্ট্যান্ড যাই হোক, পার্টিশন হলে তো রিফিউজির উদ্ভব হবেই। তিনকোনিয়া থেকে বাসস্ট্যান্ড সরে যাবার পরে বর্ধমানবাসী ও বর্ধমান দিয়ে যাতায়াত করা মানুষের ভোগান্তি কম হয়নি। একটি ভদ্রলোক ট্রেনে করে বর্ধমান এসেছে বাসস্ট্যান্ড থেকে বাস ধরে অন্যথা যাবে বলে, তিনকোনিয়া এসে দ্যাখে বাসস্ট্যান্ড হাওয়া। সেইমুহূর্তে তার পক্ষে কতোটা ভদ্র থাকা সম্ভব বলুন তো? একদিকে নবাবহাট ও অন্যদিকে আলিশা, মধ্যে দিশেহারা দেশ আমাদের বর্ধমান। যাইহোক, কালের নিয়মে এই শহরবাসী হয়ত এই নিদারুণ পার্টিশনের রেশ কাটিয়ে উঠেছে, কিন্তু এর ছাপ আমাদের প্রিয় শহরের ওপরে চিরস্থায়ী ভাবে থেকে যাবে।
তার কিছুদিন পরে দেখলাম শিয়াংডাঙা মোরে বিশালাকার এক ল্যাম্প পোস্ট বসানো হল। সে বিশাল উঁচু এক পোস্ট। মাথায় চার পাঁচটা হাই পাওয়ার হ্যালোজেন। বেশ কয়েক যায়গাতেই বসানো হয়েছিল মনেহয়। লোকে বলল অনেক আলো হবে। বর্ধমান আলোকিত হবে। সে হ্যালোজেন এখন জ্বলে না। আন্তত শিয়াংডাঙার মোরে যেটা লাগানো, সেটি না। কার্জন গেটে ওরম উঁচু পোস্টে হাই পাওয়ার হ্যালোজেন লাগালে ব্যাবহারিক দিক থেকে সঠিক বলা যায়। শিয়াংডাঙায় স্ট্যান্ডার্ড হলুদ হ্যালোজেন যথেষ্ট। উদ্দেশ্য সঠিক, কিন্তু সব জায়গাতে এই খর্চা সাপেক্ষ পরিকাঠামোর দরকার ছিল বলে মনে হয় না।
আজকাল শহরে বেশ কিছু গেট দেখা যাচ্ছে। তাদের বিভিন্ন গল্প। কোনটাই সুদর্শন কিছু নয়, এবং তা বানানোই বা কেন হল, কারণ এখনও আমি জানি না। একজন স্থপতির চোখে বেমানান লাগবে প্রথমেই, কিন্তু মানুষের বাহবা পাওয়ার জন্যে যথেষ্ট। মাঝে ছয়মাস আমি দার্জিলিঙে ইন্টার্নশিপ করতে গেছিলাম। ফিরে দেখি লাল্টূ স্মৃতি সংঘের সামনে বিশাল এক গেট। মোটামুটি দেখতে একটি গোপুরা মার্কা গঠন, গায়ে টেরাকোট্টির বাস রিলিফের কাজ লাগানো। মেনে নিলাম, কিন্তু দেখি গেটের ওপরে লেখা ‘নীলপূরম’। এই নীলপূরমটি কার মস্তিস্ক প্রসূত তা জানার প্রবল ইচ্ছা আছে। বলি কি দাদা ওটা নীলপুর, বর্ধমান শহরের একটি অঞ্চল। মামাল্লাপুরম নয়। পিছনে ম দিলেই একটি ছোট্ট অঞ্চল সাম্রাজ্য হয়ে যায় না। বরং বেশ হাস্যকর ও মূর্খবৎ শোনায়। কিছুদিন পরে দেখি উল্লাশ টাউনশিপের সামনে অদ্ভুত দর্শন আরেকটি গেট হয়েছে। বেশ বিকট কিছু রঙের সমন্বয় ও কারুকার্যে ভর্তি এই গেট অনেকটা মধ্য যোগীয় একটি পৌরাণিক নগরের প্রধান প্রবেশ দ্বারের মতন লাগত আমার। পার্থক্য একটাই, এই নগর বর্ধমান, দ্বারকা বা ইন্দ্রপ্রস্থ নয়। এই গেট এখানে বেমানান, আউট ওফ কন্টেক্সট। বর্ধমানকে বর্ধমানই থাকতে দিন দয়া করে, একবিংশ শতাব্দীর পুরাণে নাম না উঠলেও চলবে। বলে রাখা ভালো, দুটির মধ্যে একটি ইতিমধ্যেই ভাঙা হয়ে গেছে, অন্যটির আয়ু ও আর খুব বেশীদিন নেই।
বর্ধমান ইউনিভার্সিটির সামনে আরেকটি নতুন তোরণ বানানো হয়েছে। বাবার সাথে ড্রাইভ এ গেলে বেশ কিছু জিনিশ চোখে পড়ে। এটি সেইসব নতুন চোখে পড়ে যাওয়াগুলির মধ্যে একটা। এটি তুলনামূলক ভাবে অনেকটাই সুদর্শন, সমানুপাতিক এবং বর্ণনাপ্রাসঙ্গিক। কিন্তু শহরে কার্জন গেট আছে বলেই যেখানে সেখানে গেট বানাতে হবে ও দরকার পরলে ভাঙতেও হবে- কেন ঠিক পরিষ্কার হল না। না মানে কোথায় কার্জন গেট আর কোথায় নীলপূরম। তফাতটা চোখে পড়ে। কার্জন গেটের প্রসঙ্গ উঠলো যখন, তখন ম্যান্ডেলা পার্কই বা বাদ যায় কেন? চিনতে পারলেন না? আরে দাদা কার্জন গেটের ঠিক উল্টো দিকে যে নতুন কন্সট্রাকশন হচ্ছে, বিশাল প্লাস্টার করা দেওয়াল। এখনো বোঝেননি? আমাদের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর বিরাট ছবি সহ একটি থ্রী-ডী রেন্ডার এর পোস্টার লাগানো? হ্যাঁ। ওইটাই। ডিজাইনটা একটু ভালো করে বানানো কি যেত না? আর বানিয়ে যখন ফেলেছে, শেষ কবে হবে তার ঠিক নেই।
সন্ধ্যের দিকে বাবার সাথে মুকেশের চায়ের দোকানে গিয়ে নিত্য প্রতিদিন চা খাবার অভ্যেস আছে। বিগ বাজার থেকে স্টেশনের দিকে একটু গেলে পাবেন, ভালো চা বানায়, খেয়ে দেখতে পারেন। সেই সুত্রে পারবিরহাটা দিয়ে যাওয়া আসা করা হয়। তা কিছুদিন আগে দেখি বাঁকা নালার ওপরে পুরনো ব্রিজটার ম্যারামত চালু হয়েছে। তুলনামূলক ভাবে দেখতে গেলে কাজটা বেশ তাড়াতাড়ি করা হয়েছে ও বেশ ভালো হয়েছে। লোকজনের সুবিধাও হয়েছে। ভালো হলে ভালো বলতেই হয়। আরেকটি জিনিশ দেখলাম- ক্লক টাওয়ার। এর প্রশংসায় বাবা আগে পঞ্চমুখ ছিলেন। মানে যখন আসানসোল-বর্ধমান ডেইলি যাতায়াত ছিল, তখন ওই ঘড়ির গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। এখন অফিসের রাস্তা আর.জি. ভবনেই শেষ হওয়ায় ক্লক টাওয়ারের দৈনিক উপকারিতা যেখানে ছিল সেখানেই আছে, বাদ পরেছে শুধু বাবার গুণগ্রাহিতা। এই ক্লক টাওয়ার বানানোর জন্য বর্ধমান ডেভেলোপমেন্ট অথরিটি কে স্থাপত্যের তরফ থেকে ধন্যবাদ। প্রচেষ্টাগত দিক থেকে এটি নিশ্চয়ই একটি জনকল্যাণ মূলক উদ্যোগ, যদিও নন্দনতত্ব ও প্রাসঙ্গিকতার দিক থেকে দেখতে গেলে আরো অনেক ভালো করে বানানো যেত। তত্সত্ত্বেত্ত, প্রশংসনীয় উদ্যোগ। এদিক ওদিক এই সেই গেট না বানিয়ে এরকম কাজের কিছু জিনিসপত্র বানালে হয় না? গেট নাহয় কার্জন টাই থাক?
বিগ বাজারের কথা যখন উঠলো, তখন বলি। স্কুলে পড়াকালীন যখন যেতাম, ওই চত্বর অনেকটাই ফাকা থাকত। মাঝিল্যা ম্যামের কাছে ইংরাজি পরা হয়ে গেলে ওইদিকে যাওয়া হতো মাঝে মধ্যে। কলেজ এ ওঠার পড়ে ওদিকে যাওয়া অনেক কমে যায়। কিন্তু যখনি যেতাম, নতুন কোন স্টল বা খাবারের দোকানের দেখা পেতাম। ধীরে ধীরে ওই চত্বরে স্টলের সংখ্যা বাড়তে বাড়তে আজকের অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে। আপনারা সবাই হয়ত দেখেছেন ও অনুভব ও করেন- অব্যাবস্থার চূড়ান্ত। এইরকম চত্বরকে আমরা বলি ‘পাবলিক স্কোয়্যার’। একে ওইটুকু স্পেস, তাতে যদি সবাই নিজের বাইক রাখতে চায়, বন্ধুদের সাথে বসে আড্ডা মারতে চায়, সাইডে দাঁড়িয়ে রোল ও চাউমিন খেতে খেতে পি.এন.পি.সি ও করতে চায়, তাহলে কিভাবে হবে বলুন তো? আরে দাদা একটা আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কইং স্পেস রয়েছে। সেখানে আপনার সাধের বাইক রাখুন। ওপরের স্পেস মানুষের জন্য, পেডেস্ট্রিয়ানদের জন্ন্যে। জনসংখ্যা বাড়লে তার সাথে প্ল্যানিং ও আনুষাঙ্গিক পরিবর্তন করা জরুরী, তা না হলে প্রচণ্ড এক ডামাডোলের সৃষ্টি হয়। সামনের রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করা যায়না। এরকম একটা গুরুত্যপূর্ণ পাবলিক স্কোয়্যারের যখন এরকম অবস্থা, তাহলে সেখানে কি একটা রিনোভেশন করা উচিৎ নয়? বিকল্প সমাধান বের করাই যায়। সব সমস্যার সমাধান হয়, শুধু খুঁজতে যা দেরি। আপনারাই বলুন।
ইউনিভার্সিটির সামনে দিয়ে ঘুরতে যাই মাঝে মাঝে। কালকে বর্ধমান সায়েন্স সেন্টারের সামনে দিয়ে জেতে গিয়ে মনে পড়ে গেল শৈশবের কথা। ছোটোবেলায় আসতাম। এক দুবারই এসেছি। মেঘনাদ সাহা প্ল্যানেটোরিয়ামেও গেছিলাম মনেহয় একবার শাঁখারীপুকুর হাউসিংএ থাকাকালীন। স্মৃতি আবছা। এই জায়গাটা বিশেষ পাল্টায়নি। কিন্তু এই রাস্তা দিয়ে যেতে গিয়ে প্রবল ঝাঁকুনি খাওয়ার পরে ঠিক করলাম এটি আপনাদের নজরে আনতে হবে। রাস্তাটির অবস্থা শোচনীয়। সে অনেক রাস্তার অবস্থাই শোচনীয় আমি জানি, কিন্তু ইউনিভার্সিটির সামনের রাস্তা যার ওপরে কিনা সায়েন্স সেন্টার ও প্ল্যানেটোরিয়ামও অবস্থিত, তার এরম দুরবস্থা মানতে পারলাম না। কিছুই কি করা যায়না?
কৃষ্ণসায়র পার্ক ও নাকি আজকাল বন্ধ থাকে। অদ্ভুত ব্যাপার দাদা। আপনার শহরে এরকম অসাধারন একটি পার্ক আছে, সেই পার্কের ব্যাবহারিক সম্ভবনা প্রচুর, আর আমরা কিনা সেটা ফেলে রেখে দিয়েছি? শুনলাম বিবাদ মালিকানা নিয়ে। দেশটা এই করেই গ্যালো দাদা। কি কারণে বন্ধ, সেটি আমার মাথাব্যাথা নয়। আমার মাথাব্যাথা কেন বন্ধ সেটা নিয়ে।বছরে একবার ফুল মেলা হতো, সেটিও তুলে উৎসব প্রাঙ্গনে পাঠিয়ে দিল। অত সুন্দর একটি আরবান ল্যান্ডমার্ক, এ ক্লাস একটি গ্রীন ব্রিদিং স্পেস বেকার পরে নষ্ট হচ্ছে। আপনাদের একটা জিনিস বোঝা জরুরী- একটি বাড়ি যেমন ফেলে রেখে দিলে তা দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়, এইরকম পাবলিক স্পেসগুলোও ঠিক সেইভাবে মানুষের অভাবে ধীরে ধীরে খয়ে যায়। ইরোশন। অথচ এর বিরুদ্ধে কাউকে কিছু বলতে শুনলাম না। অবাক কান্ড।
সবই মানলাম কিন্তু এখন যা হচ্ছে সেটি মেনে নেওয়া যাচ্ছে না।পুলিশ লাইনে আশার আগে বাবা মাঝে মাঝে এইদিকটায় বেড়াতে নিয়ে আসতেন। লাল্টু স্মৃতি সঙ্ঘ থেকে উল্লাস অব্দি আমার বড্ড প্রিয় ছিল।রাস্তার কারণে নয়। চারিপাশের গাছপালার কারণে। রাস্তাটা আগে অপূর্ব ছিল। দুদিকে সারি দিয়ে গাছ, ঠিক যেন একটা বুলেভার্ড। সোজাসুজি প্রসঙ্গে আসি। জি.টি. রোড চওড়া করবে বলে তার দুপাশের অসংখ্য গাছ কেটে সাফ করে দিল। এটার কি সত্যিয় দরকার ছিল?এই নিয়ে হয়ত নানা মুনির নানা মত, কিন্তু আমার মনেহয় খুব বড় ভুল করে ফেলেছি আমরা এই গাছগুলি কেটে। আদ্ভুত ব্যাপার দাদা, এতদিন ধরে এত বড় বড় গাছ এই রাস্তাকে ছায়া দিল, মনরম করে তুলল আমাদের যাত্রাকে, আর হতাথ একদিন সেই বড় বড় গাছ কেটে আমরা রাস্তা বানাচ্ছি। আপনি বলতেই পারেন কি মানুষের স্বার্থে রাস্তা চওড়া করা হচ্ছে। দাদা স্বার্থ শুধু আপনার আছে। গাছগুলি কি বিনামুল্যে ছিল ওখানে এদ্দিন? প্রায় ৪৭৮ টি গাছ কেটে সাফ করে দিল। কেউ প্রতীবাদ করল না। কেউ কিচ্ছু বলল না।
যাইহোক, ইমোশন ছেড়ে লজিক দিয়ে বোঝাই। আজকেই ডি.ভি.সি মোর দিয়ে আশার পথে দেখলাম কিছুটা রাস্তা পাকা করা হয়েছে। সে বিশাল চওড়া রাস্তা মশাই, কে যে অত রাস্তা ব্যাবহার করবে, জানা নেই। ন্যাশনাল হাইওয়ের থেকেও চওড়া লাগছে। যাকগে, এখানে যায়গা পেয়েছে, যতটা পেরেছে চওড়া করেছে। কিন্তু ভেবে দেখুন, সব যায়গাতে কিন্তু সমান চওড়া করতে পারছেনা। লাল্টু স্মৃতি সঙ্ঘয়ের সামনে থেকে রাস্তা ক্রমশ সরু হতে হতে পারবিরহাটা মোরে এসে কিন্তু যে কে সেই। এদিকে দাদা ট্রাফিকএর প্রবলেম তো ওই বিরহাটা এলাকায়। রাস্তা চওড়া তো ওখানে লাগত। যেখানে দরকার কম, সেখানে করে লাভ? বোটল-নেক টা আগেও ছিল, এখন আরই বেশী হল। উল্লাস থেকে লাল্টু স্মৃতি সঙ্ঘ অব্দি তো দু পাশের গাছ জবাই করে বাড়ানো হল রাস্তা। বলা ভালো, হচ্ছে। কবে হবে জানা নেই। রাস্তার হাল অত্যন্ত খারাপ, আর সেভাবেই পরে আছে। এদিকে গর্ত, ওদিকে খুঁড়ে রাখা মাটির পাহাড়, মানুষের যে অসুবিধা হচ্ছে, তার মাথাব্যাথা তো প্রশাসনের নেই। ছিন্নমস্তা কালীবাড়ি থেকে একটু এগিয়ে দেখবেন রাস্তা কেটে ড্রেন হচ্ছে। সে তো বহুকাল ধরে ওরকম অবস্থাতেই পড়ে। শহরের প্রধান রাস্তা কেটে ফাক করে যাই বানানো হচ্ছে হোক, কিন্তু এভাবে মাসের পর মাস ওটাকে ফেলে রেখে দেওয়ার মানে কি? এইসব ক্ষেত্রে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কাজ শেষ করে রাস্তা চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া উচিৎ। সেখানে রাস্তা কেটে ফেলে রেখে দিয়েছে। মানুষের কত অসুবিধা আছে তার ধারনা থাকা সত্তেও তারা কিছুই করছে না। মশকরা করছে প্রশাসন? এবার আসি বোটল-নেক এ। আলিশা থেকে পারবিরহাটা মোর অব্দি অনেক রাস্তাই এসে জি.টি. রোডে মিশেছে। যত বিরহাটার দিকে যাবেন, ট্রাফিক ততো বাড়বে। তাহলে মশাই চওড়া করার দরকার ছিল ওই এলাকা যেখানে ট্রাফিক সব থেকে বেশী। চওড়া কোথায় করা হল? সেইখানটাই যেখানে রাস্তায় চাপ কম। এখানে তো দাদা গাছ ছিল। তারা প্রতীবাদ করতে পারেনি বলে তাদের নৃশংস ভাবে খুন করা হল। রাস্তাও দরকারের থেকে অনেক চওড়া করে দিল। পারবিরহাটার ওখানে কি করবে? আর.জি. ভবন ভাঙতে পারবে? ওখানে যত যা আছে, ভেঙ্গে ওখানেও একি রকম চওড়া রাস্তা করতে পারবে? বানিয়ে দ্যাখাক, তাহলে বুঝব। ফ্লাইওভার বানাবার মত যায়গা তো নেই।
দুমদাম রাস্তা চওড়া করে দেওয়া টা খুব বোকা কাজ। ইডিয়ট’স সোলিউশন। পাঁচ বছর পড়ে এই চওড়া রাস্তাই আবার কম পড়ে যেতে পারে। এক্সিস্টিং রোড নেটওয়ার্ক এর সঠিক ব্যাবহার করতে হবে। সঠিক ট্রান্সপোর্টেশন মাস্টারপ্ল্যান করতে হবে। ভেহিকুলার মুভমেন্ট পলিসি বানাতে হবে। স্ট্রাটেজিক প্ল্যানিং করে রাস্তা ও ট্রাফিক সারভে করে মানুষের চলাচলের ভিত্তিতে ট্রান্সপোর্টেশন প্ল্যানিং ম্যাপ বানাতে হবে। আমাদের যা রিসোর্স আছে, সেটির সদব্যাবহার না করে আমরা যদি পরিবেশের বুকে কোপ মেরে রাস্তা চওড়া করতেই থাকি, তাহলে সমাধান কোনদিনও আসবে না। টোটোর সংখ্যার ওপরে কোন বিধি নিষেধ নেই। আজকাল একটি প্যাসেঞ্জার পেলেও একটা টোটো চলে যায়। এত টোটোর দরকার আছে নাকি? আত্যাধিক সংখ্যক টোটো চললে রাস্তা জ্যাম হবেই। শহরের বুক চিঁরে বাস যাচ্ছে, তবুও সেই রাস্তাতেই টোটো কেন চলছে বুঝিনি। প্রাইমারি রোডে বাস চলুক। সেকেন্ডারি ও টারসিয়ারি রোডে টোটো ও রিকশা চললে ক্ষতি কি? এইটুকু শহরে সবাইকে নিজের দু চার চাকা নিয়ে বেরোতেই হবে? পাবলিক ট্রান্সপোর্টেশনের ব্যাবহার করুন। ট্রান্সপোর্টেশন নিয়ে পরে নিশ্চয়ই আবার লিখবো। তার জন্যে বেশ পড়াশুনোর দরকার। কিন্তু এইটা একদম ঠিক হোলোনা। উন্নয়নের নামে আমাদের শহরের সবথেকে সুন্দর রাস্তাটার বারোটা বাজিয়ে দিল, আর কেউ কিছুই বলল না। কেন? ভেবে দেখবেন।
মনে আছে তো নীলকণ্ঠ বাগচীর সেই অমোঘ উক্তি – ” ভাবো। ভাবো । ভাবা প্র্যাকটিস করো “?
ভাববেন তো? ভেবে জানাতে ভুলবেন না। অপেক্ষায় রইলাম।
লিখেছেন শুভায়ন এম, কো- ফাউন্ডার ও এডিটর, স্থাপত্য।
ফিচার ইমেজ সোর্স, কৃতজ্ঞতা স্বিকারঃ সঞ্জয় কর্মকার।
“এই চিঠি ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে লেখা। এতদিনে বেশ কিছু জিনিষ বদলে গেছে শহরে, তার মধ্যে মোটামুটি সব কটার উল্লেখ আছে এই চিঠিতে। সেসব নিয়েও বলার আছে বেশ কিছু কথা, লিখে ওঠার সময় পাচ্ছিনা এই যা। আমার প্রিয় শহর বর্ধমানের অবস্থার অবনতি হচ্ছে দিনে দিনে। আমরা সবাই নীরব দর্শক, আর প্রশাসন কে নিয়ে কিছু বললাম না, পাছে তেড়ে এসে মেরে দ্যায়! যাইহোক, আমার প্রিয় বর্ধমানবাসীর উদ্দেশ্যে কিছু কথা: দ্বিতীয় অংশ আসছে কিছুদিনের মধ্যেই। এবারে একেবারে ছবিসহ প্রমান নিয়ে লিখব দাদা, হাওয়ায় কথা অনেকদিন হল। তদ্দিন প্রিয় শহরবাসী, ভাবনা চালিয়ে যান!” – শুভায়ন এম, জুলাই ২০১৯
স্থাপত্য সাধারন মানুষের মধ্যে আর্কিটেকচার ও ডিজাইন নিয়ে সচেতনতা গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে বাংলা ভাষায় একমাত্র অনলাইন ম্যাগাজিন। আমাদের পাশে থেকে ও সমর্থন করে এই উদ্দেশ্য সফল করতে আমাদের সাহায্য করুন।
ওয়েবসাইট (Website) | ফেসবুক (Facebook) | ইন্সটাগ্রাম (Instagram) | লিঙ্কড-ইন (LinkedIn)
Get real time updates directly on you device, subscribe now.
Shubhayan M is a graduate architect from the Dept. of Architecture, Town & Regional Planning, IIEST Shibpur. Currently a student of Rural Management at the Institute of Rural Management, Anand, and a freelance design journalist, he is passionate about visiting places and exploring the local rituals, cultures, traditions, and people. He is the co-founder and managing editor of Sthapatya, the only platform in the world that discusses design and architecture in Bengali with the aim of raising design awareness amongst the common populace by using a colloquial language of expression. He won the third position in the International Essay Competition 2020 organized by the Council Of Architecture, India in August, 2020. He was also awarded the A3F Architectural Journalism Award '17 by the A3F Foundation in Chandigarh in November 2017 for his constant efforts to promote the field of design literature in India. He has been awarded the Writing Architecture Trophy ’17 in the 61st NASA Convention in Jaipur. In the past, he has served as the convener and editor-in-chief of the Indian Arch '16, the annual journal of National Association of Students of Architecture, India, and has been the student editor of the Indian Institute of Architects West Bengal chapter.
Next Post
Recover your password.
A password will be e-mailed to you.